ইরান-ইসরাইল সংঘাত: আজকের রাতটি ভয়ংকর হতে পারে

মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫ ৯:২২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ইরান-ইসরাইল সংঘাত পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে এবং পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল ও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
আজকের রাতকে দুই দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ভয়ংকর রাত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, কারণ সামরিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে একাধিক হুমকি ও পাল্টা হুমকি উচ্চারিত হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের নাগরিকদের অবিলম্বে তেহরান ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই হঠাৎ হুঁশিয়ারি আন্তর্জাতিক মহলে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। জি৭ সম্মেলন থেকে হঠাৎ ওয়াশিংটনে ফিরে গিয়ে ট্রাম্প জানান, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এবং যেকোনো ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন মার্কিন প্রশাসনকে। ট্রাম্প ইরানকে পরমাণু চুক্তিতে ফিরতে চাপ দিচ্ছেন এবং ইসরাইলের সঙ্গে সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি একাধিক সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা তিনি নাকচ করেন নাই। তিনি বলেন, ইসরায়েল ইরানের শীর্ষ বিজ্ঞানীদের টার্গেট করেছে এবং আরও পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। নেতানিয়াহু মনে করেন, খামেনিকে হত্যা করলে যুদ্ধ বাড়বে না, বরং দ্রুত শেষ হবে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকেও ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে নামার আহ্বান জানিয়েছেন। এই ধরনের বক্তব্য ইরানকে আরও প্রতিশোধপরায়ণ করে তুলেছে এবং সংঘাতের মাত্রা বাড়িয়েছে।
ইরান বর্তমানে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। রাজধানী তেহরানসহ গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোতে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে। ইরান তাদের অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও আকাশ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। বেশ কিছু ইসরায়েলি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইরান। নাতান্জ, ইসফাহান, ফোরদু, তাবরিজসহ বিভিন্ন কৌশলগত অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো বিশেষ সুরক্ষায় রাখা হয়েছে।ইরানের সামরিক নেতৃত্ব ঘোষণা দিয়েছে, তারা দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত এবং গোপন সামরিক শক্তি ব্যবহারের হুমকি দিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস নিমিটজসহ একাধিক যুদ্ধজাহাজ উপসাগরে মোতায়েন রয়েছে এবং তাদের কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ইউনিট মোতায়েন করেছে এবং দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ প্রস্তুতির নির্দেশ।
যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি—সবাই ইরানকে সংঘাতে লাগাম টানার আহ্বান জানিয়েছে, কিন্তু ইরান জানিয়েছে, এখন তাদের একমাত্র লক্ষ্য ইসরায়েলের আগ্রাসনের মোকাবিলা করা এবং প্রতিশোধ নেয়া। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধের ঝুঁকি সর্বোচ্চ পর্যায়ে, এবং অনিচ্ছাকৃত উত্তেজনা বা হিসাবের ভুলের আশঙ্কা বাড়ছে।
আজকের রাতটি ইরান-ইসরাইল সংঘাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ভয়ংকর রাত হতে পারে। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের বিস্তার, নেতাদের সরাসরি হুমকি, পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনার ওপর হামলা এবং মার্কিন সামরিক প্রস্তুতি—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা বাড়ছে।
১৩৩ বার পড়া হয়েছে