দেখলাম তান্ডব, বাংলাদেশের মুভি

পরিচালক রায়হান রাফি এবং প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিলের এই প্রজেক্টটি ঈদুল আজহায় মুক্তি পেয়েই দর্শকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

‘তাণ্ডব’-এর গল্প আবর্তিত হয়েছে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। মুখোশধারী একদল লোক ‘চ্যানেল বাংলা’ অফিসে ঢুকে সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। তাদের নেতা ‘স্বাধীন’ (শাকিব খান), লাইভ সম্প্রচারে এক মন্ত্রীকে গুলি করে এবং ঘোষণা দেয়, “Let’s begin the show…”। এরপর শুরু হয় টানটান উত্তেজনার এক লাইভ ব্রডকাস্ট, যেখানে রাষ্ট্র, প্রশাসন, সোয়াট টিম, সাংবাদিক—সবাই জড়িয়ে পড়ে। জিম্মিকারী স্বাধীন মুক্তিপণ হিসেবে চারজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে চান, এবং তাদের সামনে নিজের গল্প বলতে থাকেন।

গল্পে উঠে এসেছে রাষ্ট্রের বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, এবং মিডিয়া-রাজনীতির অন্ধকার দিক। নির্মাতা সরাসরি কোনো নাম না বললেও, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বাস্তবতার ছায়া স্পষ্ট। বিশেষ করে ‘আয়রন সেল’-এর ওয়ান-টেক অ্যাকশন দৃশ্যটি দর্শকদের মনে করিয়ে দেয় আন্তর্জাতিক মানের অ্যাকশন সিনেমার কথা।

শাকিব খান এই মুভিতে দ্বৈত চরিত্রে (স্বাধীন ও মিখাইল) অনবদ্য অভিনয় করেছেন। তার পারফরম্যান্সে ছিল শক্তি, আবেগ, এবং ক্ষোভের নিখুঁত মিশেল—এটাই তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা কাজ বলে মনে করছেন সমালোচকরা।
সাবিলা নূর এখানে প্রথমবারের মতো বড়পর্দায় প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করলেন। শুরুতে কিছু সমালোচনা থাকলেও, মুক্তির পর তার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। তবে শাকিবের সাথে তাকে বেমানান মনে হয়েছে॥
জয়া আহসান ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সাংবাদিক সায়রা চরিত্রে, চমৎকার অভিনয় করেছেন। তার উপস্থিতি গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
আফরান নিশো ও সিয়াম আহমেদ—দুজনেই সংক্ষিপ্ত উপস্থিতি দিয়ে দর্শকদের চমকে দিয়েছেন, বিশেষ করে সিয়ামের চরিত্রটি ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত হবে বলে ইঙ্গিত দেয়।

অ্যাকশন কোরিওগ্রাফি ও ওয়ান-টেক শট ছিল সিনেমার অন্যতম আকর্ষণ। বিশেষ করে ‘আয়রন সেল’ দৃশ্যটি আন্তর্জাতিক মানের। সিনেমাটোগ্রাফি, এডিটিং, এবং ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সবকিছুতেই ছিল আধুনিকতা ও পেশাদারিত্বের ছাপ। সংলাপ ছিল ধারালো, আবেগঘন এবং বাস্তবসম্মত। গল্পে চমক আনতে গিয়ে কিছু দৃশ্য অসম্পূর্ণ থেকে গেছে বলে মনে হয়েছে। এটি বাংলাদেশের প্রথম ‘সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স’, কারণ এতে ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমার চরিত্রের উপস্থিতি রয়েছে।

‘তাণ্ডব’ নিঃসন্দেহে বাংলা সিনেমার নতুন যুগের সূচনা করেছে। অ্যাকশন, রাজনৈতিক বক্তব্য, তারকাবহুল অভিনয়—সব মিলিয়ে এটি ২০২৫ সালের সবচেয়ে আলোচিত ও দর্শকনন্দিত সিনেমা। যারা আধুনিক, থ্রিলারধর্মী এবং ভাবনাজাগানিয়া সিনেমা পছন্দ করেন, তাদের জন্য ‘তাণ্ডব’ অবশ্যই দেখা উচিত বলে মনে করি।