ইরান “যেকোনো মুহূর্তে” পারমাণবিক অস্ত্র প্রকাশ্যে আনতে পারে: মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে

রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫ ২:২১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানের পর, যখন গোটা অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আশঙ্কা—ইরান যেকোনো মুহূর্তে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র প্রকাশ্যে আনতে পারে।
১৩ জুন ভোরে ইসরায়েল “অপারেশন রাইজিং লায়ন” নামে এক বৃহৎ সামরিক অভিযান চালায়, যার লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, সামরিক ঘাঁটি ও শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তারা। ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নাতাঞ্জসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বিস্ফোরণ ঘটে, নিহত হন ইরানের বিপ্লবী গার্ডের শীর্ষ কমান্ডার ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই অভিযানকে “ইসরায়েলের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই” বলে অভিহিত করেন এবং জানান, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।
ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ও “বোমার দোরগোড়ায়”।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) এবং পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ইরান ইতিমধ্যেই ৬০% মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত করেছে, যা আরও কিছু পরিশোধন করলে তা দিয়ে একাধিক পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব। ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ইরান গোপনে পারমাণবিক বোমার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশ প্রস্তুত করেছে এবং “বোমা তৈরির সকল উপাদান হাতে রয়েছে”—এমনকি কয়েক দিনের মধ্যেই ১৫টি পারমাণবিক বোমা তৈরির মতো ফিসাইল উপাদান তাদের হাতে রয়েছে।
ইসরায়েলি হামলার পরপরই ইরান পারমাণবিক আলোচনা বাতিল করেছে এবং হুমকি দিয়েছে, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা “সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত”। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেই ইসরায়েলকে “কঠোর প্রতিশোধ” নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষ করে জাতিসংঘ, চীন, তুরস্ক, সৌদি আরব ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্লেষক ও গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, ইসরায়েলের হামলার পর ইরান অভ্যন্তরীণভাবে পারমাণবিক অস্ত্র প্রকাশ্যে আনার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। মার্কিন ও ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, ইরান এখন এমন অবস্থানে রয়েছে—যদি চায়, তাহলে “যেকোনো মুহূর্তে” পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার ঘোষণা দিতে পারে বা অস্ত্রের অস্তিত্ব প্রকাশ্যে আনতে পারে। এই সম্ভাবনা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে।
ইরান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্রের অস্তিত্ব ঘোষণা করেনি, তবে সাম্প্রতিক সামরিক ও কূটনৈতিক পরিস্থিতি এবং পারমাণবিক কর্মসূচির অগ্রগতি বিবেচনায়, গোটা বিশ্ব শঙ্কিত—ইরান যেকোনো মুহূর্তে “পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র” হিসেবে নিজেদের ঘোষণা করতে পারে। এই ঘোষণার সম্ভাবনা মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে।
১৪৯ বার পড়া হয়েছে