শেখ হাসিনার ২০২৩ সালের মে মাসে লন্ডন সফর: সময়কাল, কর্মসূচি, সফরসঙ্গী, বিমানযাত্রা, ব্যয় এবং প্রাপ্তি
শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫ ৫:৩৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
"আমরা অতি সহজেই সবকিছু ভুলে যাই, তাই এখন অনেক আওয়ামী সমর্থক গোষ্ঠী বার বার প্রশ্ন তুলছে। ড. ইউনূস তার সফরসঙ্গী নিয়ে লন্ডনে ব্যক্তিগত সফরে গিয়ে দেশের কোটি কোটি টাকা অপচয় করেছেন। তাহলে বাংলাদেশের মানুষ কিসের জন্য লন্ডনের দিকে তাকিয়ে ছিল? একজন রাষ্ট্রপ্রধান যখন বিদেশে ব্যক্তিগত সম্মাননার জন্য আমন্ত্রিত হবেন, তখন কি তার রাষ্ট্রীয় পরিচয় দেশে রেখে আসবেন? আর ড. ইউনূস লন্ডন এই সফরে কি অর্জিত হয়েছে সেটা জাতি বুঝতে পারছে। আগে হাসিনার প্রমোদ ভ্রমণে হিসেব পর্যালোচনা করে তুলে ধরলাম, তুলনামূলক অনেক কম ব্যয় করছেন ড. ইউনূস।"
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালের মে মাসে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে লন্ডনে অবস্থান করেন। এই সফর ছিল তাঁর টানা জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরের অংশ। লন্ডন সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজা তৃতীয় চার্লস এর রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা।
৪ মে থেকে ৮ মে ২০২৩ (মোট ৫ দিন) ক্ল্যারিজ হোটেল, মেফেয়ার, লন্ডন, বিলাসবহুল ৫-তারকা হোটেলে প্রায় ৫০ জন সফরসঙ্গী প্রতিনিধি দল, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ব্যক্তিগত সহকারী ও সাংবাদিক থাকেন।
এই সফরেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, হাইকমিশনার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা টিম ছিলেন।
ঢাকা থেকে লন্ডন: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভিভিআইপি ফ্লাইটে যাত্রা। ওয়াশিংটন ডিসি থেকে লন্ডন: ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের নিয়মিত ফ্লাইট। লন্ডন থেকে ঢাকা: বিমানের নিয়মিত ফ্লাইট (BG-208)।
এই সফরে হাসিনা ৬ মে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানী ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ।
মার্লবোরো হাউসে কমনওয়েলথ নেতাদের সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে সাক্ষাৎ, রাজ্যাভিষেক সংবর্ধনায় স্বল্প সময়ের সৌজন্যমূলক আলাপ। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি ও তার স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ। ভুটানের রাজা-রানী, মিসর, রুয়ান্ডা, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, গাম্বিয়া, নামিবিয়া ও উগান্ডার রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ। কমনওয়েলথ মহাসচিব ও সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের সঙ্গে বৈঠক। প্রবাসী বাংলাদেশিদের নাগরিক সংবর্ধনা ও বিবিসি-তে সাক্ষাৎকার।
ক্ল্যারিজ হোটেল তিনি এবং সফরসঙ্গীরা অবস্থান করেছিলেন। এই হোটেলের ভাড়া বিলাসবহুল স্যুট £১২,০০০ (প্রতি রাত), ভিআইপি £৩,৫০০ থেকে £৮,০০০ (প্রতি রাত), সাধারণ রুমের ভাড়া: £১,১০০ – £১,৫০০ (প্রতি রাত)। ৫ রাতের জন্য একাধিক রুম ও স্যুট বুকিংয়ের ক্ষেত্রে মোট ব্যয় কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বিমান ভাড়া ভিভিআইপি ফ্লাইট ও বিজনেস ক্লাস টিকিটের খরচ মিলিয়ে ব্যয় কয়েক কোটি টাকা।সফরসঙ্গীদের খরচ, নিরাপত্তা ও আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারি হিসাব প্রকাশিত না হলেও, পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা অনুযায়ী মোট ব্যয় ৩-৫ কোটি টাকা বা তার বেশি হতে পারে।
প্রাপ্তি ও কূটনৈতিক যা অর্জিত হয়েছিল বলে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার। রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দুই দেশের ঐতিহাসিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান ও বিশ্বনেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ: দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় আলোচনার সুযোগ। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলকরণ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে সংযোগ কমিউনিটি সংবর্ধনা ও মতবিনিময়।
এ সফরে শেখ হাসিনার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে সৌজন্যমূলক আলাপ যা দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হিসেবে চালানোর চেষ্টা করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনের সফরের দিল্লীতে ঋষি সুনাকের একটি ছবি যেখানে হাঁটুতে বসে হাসিনার সাথে কথা বলছেন ব্যাপক আলোচিত করা হয়।
মনে পড়েছে?
শেখ হাসিনার আমল (২০১৯-২৪), বিদেশ সফরের সংখ্যা ৪৮, মোট ব্যয় ৪৫০ কোটি টাকা, সফরদলের আকার ১৩৪-২২৭ জন, ফ্লাইট ভিভিআইপি চার্টার্ড ও সরকারি বিমানে।
ড. ইউনূস সরকারের যুক্তরাজ্য সফরের ব্যয় একক সফর হিসেবে উল্লেখযোগ্য, তবে শেখ হাসিনার আমলের একাধিক সফরের তুলনায় এটি বেশি নয়—বরং কিছু সফরের তুলনায় অনেক কম। তবে উভয় আমলেই সফরদলের আকার, হোটেল ও ফ্লাইট ব্যয় নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনা ছিল এবং আছে। অতএব, ‘ইতিপূর্বে বাংলাদেশের সরকার প্রধানরা বিদেশ সফরে যেসব ব্যয় করতেন তার তুলনায় ইউনূস সরকার বেশি ব্যয় করেছে’—এমন দাবি তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে পুরোপুরি সত্য নয়।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
১৪২ বার পড়া হয়েছে