ইরান-ইসরাইল উত্তেজনা: যুদ্ধের আশঙ্কায় কূটনীতিক প্রত্যাহার

বৃহস্পতিবার , ১২ জুন, ২০২৫ ১২:২০ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি ও আঞ্চলিক আধিপত্য নিয়ে চলমান দ্বন্দ্ব এখন সরাসরি সামরিক সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে।
এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে তাদের কূটনীতিক ও পরিবারের সদস্যদের প্রত্যাহার শুরু করেছে।
ইরান বর্তমানে ৬০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিতে নির্ধারিত সীমার অনেক বেশি। ইরান বলছে, তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের অভিযোগ—তেহরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ী স্পষ্ট বলেছেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তাদের অধিকার এবং এতে পশ্চিমা হস্তক্ষেপ বরদাশত করা হবে না।
নিউইয়র্ক টাইমসসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রকাশ্যেই বলেছেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে যেকোনো মূল্যে বিরত রাখা হবে। সাম্প্রতিক সেনা মহড়া ও কৌশলগত প্রস্তুতি এরই ইঙ্গিত দেয়।
এদিকে ইরানও পাল্টা হুমকি দিয়েছে—তাদের ওপর হামলা হলে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সব সামরিক ঘাঁটি ইরানের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সব ঘাঁটিই আমাদের আওতায়, আমরা সেগুলোর অবস্থান জানি এবং প্রয়োজনে বিনা দ্বিধায় তা লক্ষ্য করব।’ তবে তিনি এখনো কূটনৈতিক সমাধান চান বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
সম্ভাব্য সংঘাতের আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইরাক, কুয়েত, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে অপ্রয়োজনীয় কূটনীতিক ও তাদের পরিবারকে সরিয়ে নিচ্ছে। পেন্টাগনও মার্কিন সামরিক সদস্যদের স্বেচ্ছায় ঘাঁটি ত্যাগের অনুমতি দিয়েছে। এই পদক্ষেপ পরিস্থিতির গুরুত্ব ও যুদ্ধের আশঙ্কা স্পষ্ট করে তুলেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পাঁচ দফা আলোচনা হলেও এখনো কোনো চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, তিনি আগের চেয়ে অনেক কম আশাবাদী। ইরানও পাল্টা প্রস্তাব তৈরির কথা জানিয়েছে, তবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে স্পষ্ট অঙ্গীকার না থাকায় তারা অসন্তুষ্ট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরাইল সরাসরি সংঘর্ষ হলে তা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা ও জ্বালানি সরবরাহে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। ইরান ইতোমধ্যে চীন থেকে বিপুল পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র জ্বালানি আমদানি করেছে এবং তাদের মিত্র গোষ্ঠীগুলোকে প্রস্তুত রাখছে। ইসরাইলও একতরফাভাবে আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত।
ইরান-ইসরাইল উত্তেজনা এখন যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। কূটনৈতিক আলোচনা কার্যত অচল। উভয় পক্ষই সামরিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে এবং পাল্টাপাল্টি হুমকি দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে কূটনীতিক প্রত্যাহার যুদ্ধের আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। আন্তর্জাতিক মহল গভীর উদ্বেগে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
১৩৬ বার পড়া হয়েছে