আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিধ্বস্ত: ২৪২ যাত্রীর মর্মান্তিক পরিণতি, একজন জীবিত

বৃহস্পতিবার , ১২ জুন, ২০২৫ ৯:৩১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় কেঁপে উঠল গোটা দেশ।
এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মডেলের একটি যাত্রীবাহী বিমান, যাতে ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু ছিলেন, তা উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই মেঘানিনগর এলাকায় ভেঙে পড়ে।
আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ (ফ্লাইট নম্বর AI171) বিমানটি ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ১:৩৪ মিনিটে উড্ডয়ন করে এবং মাত্র ৪ মিনিটের মধ্যেই মেঘানিনগর এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। বিমানে ছিলেন ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ ও ১ জন কানাডিয়ান নাগরিক; এছাড়া ১১ জন শিশু ও ২ জন সদ্যোজাতও ছিলেন। দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ২০০ থেকে ২৪২ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে, যদিও প্রশাসনিকভাবে এখনো চূড়ান্ত সংখ্যা ঘোষণা করা হয়নি। উদ্ধারকার্য চলছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০টি ঝলসানো দেহ উদ্ধার হয়েছে।
এয়ার ইন্ডিয়ার বিধ্বস্ত বিমানটি আহমেদাবাদের BJ মেডিকেল কলেজের যে হোস্টেলের ওপর আছড়ে পড়ে, সেখানে নিহত হয়েছে ৫ জন মেডিকেল শিক্ষার্থী (৪ জন আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও ১ জন পোস্টগ্র্যাজুয়েট রেসিডেন্ট)। আহত হয়েছে অন্তত ৩০-৪০ জন শিক্ষার্থী ও জুনিয়র ডাক্তার গুরুতর আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই-তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।দুর্ঘটনার সময় হোস্টেলের মেসে দুপুরের খাবারের জন্য ১৫০-২০০ জনের মতো শিক্ষার্থী, রেসিডেন্ট ডাক্তার ও কর্মী উপস্থিত ছিলেন। অনেকে দগ্ধ ও গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
হোস্টেল ভবনের একটি অংশে বিমানটির বড় অংশ আটকে যায় এবং আশেপাশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই মেডিকেল শিক্ষার্থী ও রেসিডেন্ট ডাক্তার।
সরকারি কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, বিমানের ১১এ নম্বর সিটের যাত্রী ওই দুর্ঘটনা থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। NDTV-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকারীদের “কোনো বেঁচে থাকা নেই” এমন ধারণার মধ্যেই ওই যাত্রীকে হাঁটতে দেখা যায় এবং তিনি গুরুতর আহত নন—শুধু তার পোশাক কিছুটা পোড়া ছিল।
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ওই যাত্রী ধোঁয়া ও ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে নিজের পায়ে হেঁটে বেরিয়ে আসছেন। পুলিশ ও উদ্ধারকারী দল বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আর কেউ জীবিত নেই।
দুপুর ১টা ১৭ মিনিট নাগাদ বিমানটি আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। উড্ডয়নের মাত্র ২০ মিনিটের মাথায়, অর্থাৎ ১টা ৩৮ মিনিট নাগাদ, বিমানটি বিমানবন্দর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মেঘানিনগর এলাকায় ভেঙে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রানওয়ে থেকেই উড্ডয়নের সময় বিমানটি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে এবং দ্রুত নিচে পড়ে যায়। ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিমানে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তের মধ্যে কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় গোটা এলাকা। দুর্ঘটনার ফলে আশপাশের কয়েকটি বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দমকলের অন্তত সাতটি ইঞ্জিন ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। আহত ও দগ্ধ যাত্রীদের স্থানীয় সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গান্ধিনগর ও ভদোদরা থেকে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১৮০ জন সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশের সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, চলছে উদ্ধারকাজ।
গুজরাট পুলিশ জানিয়েছে, বিমানে মোট ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু ছিলেন। অন্তত ২০০ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে, যদিও সরকারিভাবে এখনও চূড়ান্ত সংখ্যা জানানো হয়নি। বহু যাত্রী গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিমানটি লোকালয়ের ওপর ভেঙে পড়ায় কিছু স্থানীয় বাসিন্দাও হতাহত হতে পারেন।
বিমানের ক্যাপ্টেন ছিলেন সুমিত সভরওয়াল। এই বিমানে যাত্রী ছিলেন গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি, তবে তাঁর অবস্থা সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়, তবে তদন্ত শুরু করেছে ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (DGCA)। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উদ্ধার ও তদন্তে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
উদ্ধার ও তদন্ত কার্যক্রম এখনও চলছে, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এখনো স্পষ্ট নয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। এই দুর্ঘটনা শুধু যাত্রীদের পরিবার নয়, গোটা দেশকেই শোকাহত করেছে।
১৪৭ বার পড়া হয়েছে