সর্বশেষ

জাতীয়

লন্ডনে চ্যাথাম হাউসে ড. ইউনূসের সংলাপ: নির্বাচন, সংস্কার ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা

মনজুর এহসান চৌধুরী 
মনজুর এহসান চৌধুরী 

বৃহস্পতিবার , ১২ জুন, ২০২৫ ১:৫৪ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার লন্ডনের খ্যাতনামা গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসে এক উন্মুক্ত সংলাপে অংশ নেন।

সেখানে তিনি বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, চলমান সংস্কার, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং নিজের রাজনৈতিক অবস্থানসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বক্তব্য দেন ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন।

চ্যাথাম হাউসের মূল প্রবেশপথের উল্টোদিকে সকাল থেকেই ড. ইউনূসের বিরোধিতাকারীদের বিক্ষোভ, স্লোগান ও লিফলেট বিতরণে পরিবেশ ছিল উত্তপ্ত। লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আমন্ত্রিত অতিথিদের প্রবেশ নিশ্চিত করা হয়। তবে ভেতরের অনুষ্ঠানে এসবের কোনো প্রভাব পড়েনি।

ড. ইউনূস বলেন, “১৭ বছর পর আমরা একটি সত্যিকারের নির্বাচন আয়োজনের দ্বারপ্রান্তে। এটি হবে আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। দেশের তরুণ প্রজন্ম জানেই না স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করাটা কী, এবার তারা সেই স্বাদ পাবে।”

তিনি ব্যাখ্যা করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব তিনটি—রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার, জুলাই গণহত্যা ও গুম-নির্যাতনের বিচার এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন।
ড. ইউনূস বলেন, “নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা কমিশন গঠন করা হয়েছে। সংস্কার ছাড়া নতুন দেশ সম্ভব নয়।”

বিএনপি ও সেনাবাহিনীর মতো অনেকেই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইলেও, কেন তিনি এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন চান—এ প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের প্রস্তুতি ও সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই নির্বাচন আয়োজন করতে হবে, যাতে তা সত্যিকার অর্থে অংশগ্রহণমূলক হয়।”

এক সাংবাদিক জানতে চান, নতুন নির্বাচিত সরকারে তিনি বা তার উপদেষ্টা পরিষদের কেউ কি যুক্ত হবেন? উত্তরে ড. ইউনূস স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “কোনোভাবেই না, একেবারেই না। আমি মনে করি, আমাদের উপদেষ্টা পরিষদের কোনো সদস্য সেটা করতে আগ্রহী হবেন না।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের কাজ হলো সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন এবং নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করা।”

ড. ইউনূস জানান, “আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষে দলটি নিষিদ্ধ হবে কি না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “সব রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতেই আমরা জুলাই সনদ চূড়ান্ত করতে চাই।”

প্রধান উপদেষ্টা জানান, ভুয়া সংবাদ ও অপপ্রচারের কারণে সাইবার স্পেসে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, যা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন, যেখানে শেখ হাসিনার অনলাইন কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্য, সাংবাদিক, বিশ্লেষক ও অ্যাকাডেমিকরা উপস্থিত ছিলেন। কেউ কেউ মনে করেন, একটি প্রধান রাজনৈতিক দলকে প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে উৎসবমুখর নির্বাচন কতটা সম্ভব—এ প্রশ্নের উত্তর ড. ইউনূস দেননি।

ড. ইউনূসের লন্ডন সংলাপে প্রধান বার্তা—সুষ্ঠু নির্বাচন, সংস্কার ও বিচারের ওপর জোর, নির্বাচিত সরকারে নিজের বা উপদেষ্টা পরিষদের কারও অংশগ্রহণের সম্ভাবনা নেই, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে বিচার শেষে, এবং বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রূপান্তরই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।

১২৩ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ সব খবর
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন