সর্বশেষ

জাতীয়

টিউলিপ সিদ্দিকী-ড. ইউনূস সাক্ষাৎ: বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক কেনো অনিশ্চিত?

মনজুর এহসান চৌধুরী
মনজুর এহসান চৌধুরী

বুধবার, ১১ জুন, ২০২৫ ১:০২ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে লন্ডনে সাক্ষাতের জন্য চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তবে, শেষ পর্যন্ত টিউলিপ এই সাক্ষাৎ পাচ্ছেন না। এটি নিশ্চিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

টিউলিপের চিঠিতে কী ছিল, কী বললেন তিনি?

 

টিউলিপ সিদ্দিক চিঠিতে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ অভিযোগ এবং তা ঘিরে তৈরি হওয়া ‘ভুল বোঝাবুঝি’ দূর করতেই তিনি এই বৈঠক চান।
তিনি আরও লিখেছেন, “আমি একজন ব্রিটিশ নাগরিক, লন্ডনে জন্মেছি এবং গত এক দশক ধরে হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছি। বাংলাদেশে আমার কোনো সম্পত্তি বা ব্যবসায়িক স্বার্থ নেই।”
টিউলিপ অভিযোগ করেন, দুদক তার আইনজীবীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি এবং ঢাকার ভুল ঠিকানায় নথিপত্র পাঠাচ্ছে। তিনি চান, ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতে এসব ‘ভুল বোঝাবুঝি’ দূর করতে চান।

 

প্রথমদিকে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর জানিয়েছিল, তারা টিউলিপের কোনো চিঠি পাননি। তবে সর্বশেষ প্রেস সচিব শফিকুল আলম নিশ্চিত করেছেন, “টিউলিপের চিঠি পেয়েছি। এটি একটি লিগ্যাল ইস্যু এবং লিগ্যাল ওয়েতে সমাধান করা হবে”।

 

প্রেস সচিব আরও জানান, ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপে টিউলিপ ছিলেন না এবং তার সঙ্গে সাক্ষাতের কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না।

 

সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্র ও কূটনৈতিক মহল জানিয়েছে, টিউলিপের চিঠিকে সরকার আমলে নিচ্ছে না এবং সাক্ষাতের কোনো সম্ভাবনা নেই।

 

টিউলিপ সিদ্দিক ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে স্টারমারের বৈঠক নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এই দুই বিষয় নিয়ে লন্ডনের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে নানা আলোচনা চলছে। অনেকেই মনে করছেন, টিউলিপের সঙ্গে স্টারমারের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা ড. ইউনূসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক না হওয়ার একটি নেপথ্য কারণ হতে পারে। টিউলিপ সিদ্দিক লেবার পার্টির একজন গুরুত্বপূর্ণ এমপি এবং কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন ছায়া মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেছেন। দুর্নীতির অভিযোগ ও তদন্তের সময়ও স্টারমার টিউলিপকে সমর্থন জানিয়েছেন এবং তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। টিউলিপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগ এবং তার সঙ্গে শেখ হাসিনার পারিবারিক সম্পর্ক নিয়ে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

 

ড. ইউনূসের চার দিনের সরকারি সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও ‘হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ। সফরসূচিতে কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরিকল্পনা ছিল এবং এ নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের কূটনৈতিক সূত্রও নিশ্চিত করেছিল। তবে সফরের সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কানাডা সফরে থাকায় বৈঠকের সময়সূচি চূড়ান্ত হয়নি এবং প্রেস সচিব স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন। শিডিউল মিললে বৈঠক হতে পারে, এখনো কোনো নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত হয়নি। সফরের অন্যান্য কর্মসূচিতে ইউরোপীয় ব্যবসায়ী, অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ, কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেল, এবং বিএনপি নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক অন্তর্ভুক্ত আছে।

 

ড. ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠকের কথা থাকলেও, কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়নি যে, টিউলিপের সাক্ষাৎ না দেয়ার জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নিজে সাক্ষাৎ বাতিল করেছেন। বরং, ড. ইউনূসের সফরসূচিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এমনটিই খবর এসেছে, তবে এর কারণ হিসেবে টিউলিপের ঘটনার উল্লেখ কোথাও পাওয়া যায়নি।

 

টিউলিপ ও তার মা শেখ রেহেনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন একাধিক অভিযোগ এনেছে, যার মধ্যে অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দ ও ফ্ল্যাট গ্রহণের অভিযোগ আছে। টিউলিপ ও তার আইনজীবীরা এসব অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।

 

টিউলিপ দাবি করেছেন, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি এবং তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের প্রমাণও যুক্তরাজ্য সরকার পায়নি।

 

সম্প্রতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অনুপস্থিতিতে বিচার শুরু হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচিত।

 

টিউলিপ-ইউনূস সাক্ষাৎ নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ, চিঠি পৌঁছালেও সাক্ষাৎ হচ্ছে না, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক নিয়ে বিভ্রান্তি থাকলেও টিউলিপ ইস্যুতে কোনো সরাসরি প্রভাব নেই, এটাই সর্বশেষ অবস্থা।

১২২ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন