দৌলতপুরে চিকিৎসকের অবহেলায় সিজারিয়ান ডেলিভারি, প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ

সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫ ৩:৩১ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়া এলাকায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় প্রসূতি আখি খাতুনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতার মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে ঘটনাটি আড়াল করার চেষ্টা করে এবং দ্রুত লাশ দাফনের জন্য পরামর্শ দেয়।
নিহত আখি খাতুন তারাগুনিয়া ফিলিপনগর ইউনিয়নের পূর্ব কবিরাজ পাড়ার ইমনের স্ত্রী। পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, রোববার (৮ জুন) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রথমে তাকে থানার মোড়ের ‘আলসেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল’ এ নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার জটিল অবস্থা দেখে উন্নত পরীক্ষার পরামর্শ দেন। তবে পরিবারের অভিযোগ, আলসেফা হাসপাতালের পরামর্শ উপেক্ষা করে, তারাগুনিয়া ক্লিনিকের দালালদের প্ররোচনায় তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তারাগুনিয়ার আবুলের ক্লিনিকে নেওয়ার পর কয়েকজন চিকিৎসক আখির সিজারিয়ান অপারেশন সম্পন্ন করেন। অপারেশন শেষে বেডে আনার পর থেকেই তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। চিকিৎসকরা পেটের চাপ দিয়ে অবস্থা আরও খারাপ করলে, তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবার দাবি করে, আসলে আখি মারা গিয়েছেন ক্লিনিকেই, কিন্তু ক্লিনিকের মালিক দায় এড়াতে হাসপাতাল রেফার্ডের নাটক করে।
তারপর মৃতদেহ আবার ক্লিনিকেই ফেরত আনা হয়। এই ঘটনা জানাজানি হলে এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যরা ক্লিনিকের সামনে হট্টগোল শুরু করে এবং ভাঙচুরের চেষ্টা করে। পরে, স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার বাড়িতে ডেকে নিয়ে টাকার বিনিময়ে বিষয়টি সমাধান করা হয় এবং রাতে দাফন সম্পন্ন হয়।
অভিযোগের ভিত্তিতে, অ্যাম্বুলেন্স চালক ফারুক হোসেন বলেন, “আমাকে ক্লিনিক থেকে রোগীকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা বললেন, রোগী মারা গেছে। এরপর তারা চাপ দিয়ে ইসিজি করেন এবং সদর হাসপাতাল থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে আবার ক্লিনিকে ফিরিয়ে আনা হয়।”
সিজারিয়ান অপারেশনে অংশ নেওয়া চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, ক্লিনিকের ছেলে এবং মাছরাঙা টেলিভিশনের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি তাশরিক সঞ্চয় সাংবাদিকদের ফোন করে ঘটনার সংবাদ প্রকাশে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি স্বীকার করেন, “রোগীর মৃত্যু আমাদের ক্লিনিকে ঘটেছে।”
অভিযোগের বিষয়ে আলসেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের ব্যবস্থাপক সুজন হোসেন বলেন, “রোগীর শারীরিক সমস্যা বুঝতে পারি। উন্নত পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু স্বজনরা আমাদের পরামর্শ না মেনে অন্য ক্লিনিকে চলে যান।”
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, “সিজারের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়া নিষেধ থাকলেও রোগী তা গোপন করে খেয়েছেন, যার কারণে সিজার পর সমস্যা হয়েছে এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।”
১২০ বার পড়া হয়েছে