নির্বাচন সময়সূচি জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা, এপ্রিলের প্রথমার্ধে হতে পারে

শুক্রবার, ৬ জুন, ২০২৫ ৬:৩১ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা করেছেন যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভবত আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একদিন অনুষ্ঠিত হবে।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি এ তথ্য প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘চলমান বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যক্রমের পর্যালোচনা করে আমি আজ নিশ্চিত করে বলছি যে, ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন তখন উপযুক্ত সময়ে বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রদান করবে।’
ভাষণে তিনি উল্লেখ করেন, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিনটি ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে তারা দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করেন, রোজার ঈদের মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে, যা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি সম্মিলিত দায়ের প্রতিফলন।
সংঘটিত সংকটের জন্য ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনকেই দায়ী করে তিনি বলেন, অতীতের ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়ার কারণে বারবার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে এক দল বর্বর ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছে। এই ধরনের নির্বাচন আয়োজনকারী যারা, তারা জাতির কাছে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত। ফলে, এমন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দলগুলো জনগণের ঘৃণার পাত্র হয়ে ওঠে।
এছাড়াও, তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব হলো একটি শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজন, যাতে দেশ ভবিষ্যতে নতুন সংকটে না পড়ে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বর্তমান নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুশাসন নিশ্চিত না হলে, জনগণের স্বার্থে স্বচ্ছতা আসবে না।
‘জুলাই সনদ’ তৈরির প্রত্যাশা
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, চলতি বছরের জুলাই মাসে সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় একটি ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করা সম্ভব হবে। এই সনদ হবে একটি প্রতিশ্রুতি, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করে বলবে যে তারা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত জনকল্যাণমুখী সংস্কারগুলো বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশাবাদী, জুলাই সনদ অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ন সংস্কার কাজগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত হবে। বাকি কাজগুলোও ধাপে ধাপে শুরু করে দেওয়া হবে, যাতে ভবিষ্যতেও এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকে।’
মিথ্যা অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য বাংলাদেশ করিডর দেওয়া হয়েছে—এমন অপপ্রচার ‘সর্বৈব মিথ্যা’ এবং বিভ্রান্তিমূলক। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অপপ্রচার চিলে কান দিয়ে যাওয়ার মতো, যারা অশান্তি সৃষ্টির জন্য এই কল্পকাহিনী বানাচ্ছে।’
তিনি জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এ ধরনের বিভ্রান্তিতে পড়বেন না। তিনি আরও জানান, জাতিসংঘের মহাসচিব গত মার্চে ঢাকা সফরে রাখাইন রাজ্যে মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য একটি ত্রাণ চ্যানেলের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা এখনও প্রস্তাব পর্যায়ে আছে। পাশাপাশি, তিনি জানান, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও সীমান্ত নিরাপত্তায় তারা কাজ করছে।
দেশের স্বার্থে তিনটি মূল ম্যান্ডেট
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, পতিত স্বৈরাচারী শাসনামল থেকে উত্তরণে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের উপর তিনি দেশের জনগণের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। এগুলো হলো: বিচার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা, গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর। তিনি বলেন, ‘এই তিনটি ম্যান্ডেট আমাদের দেশের সঙ্গে আমাদের চুক্তি।’
জুলাই হত্যাযজ্ঞের বিচার শুরু
তিনি জানান, গত বছর জুলাই-আগস্টের হত্যাযজ্ঞ ও ১৬ বছরের গুম-খুনের ঘটনা তদন্ত শুরু হয়েছে। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে দেশের বিভিন্ন আদালত ও তদন্ত সংস্থাকে সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো বিচার প্রক্রিয়াকে গণমাধ্যমে সরাসরি প্রচার করা হচ্ছে, যা বিচার বিভাগে জনগণের আস্থা বাড়াবে।
অপরাধী ও অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিগত সরকারের পতনের পর যারা গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ নষ্ট বা লুকানোর চেষ্টা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, ডিজিটাল এভিডেন্স রিকভার, রিস্টোরের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে ও জনগণের সহযোগিতা কামনা করা হয়। পাশাপাশি, গুমের বিরুদ্ধে একটি স্বাধীন কমিশনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে, যার জন্য আইন প্রণয়নের কাজও শেষের পথে।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিদেশি বিনিয়োগ
তিনি জানান, চলতি ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ৭৫৬ মিলিয়ন ডলার, এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের আলোচনা চলছে। চীনসহ অন্যান্য দেশ থেকে বিনিয়োগের আগমন অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য সরকারি ও জনগণের একত্রিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে অর্থনীতির মূল কেন্দ্র
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির ‘হৃৎপিণ্ড’। এই বন্দরের উন্নয়নে বিশ্বমানের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরি। তিনি বলেন, এই বন্দর আধুনিক হলে দেশের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।
সংঘটিত অপপ্রচারে সতর্কতা
প্রধান উপদেষ্টা সতর্ক করে বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদ ও তার দোসররা নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রয়াসে বাধা সৃষ্টি করার জন্য নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি সবাইকে একত্রে থাকতে এবং অগ্রগতি রুখে দেওয়ার আহ্বান জানান।
ভাষণের শেষাংশে তিনি দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা ও সালাম জানান।
১০৬ বার পড়া হয়েছে