সীমান্তে নজরদারি জোরদার হলেও সুনামগঞ্জে বেড়েছে গরু চোরাচালান

বৃহস্পতিবার , ৫ জুন, ২০২৫ ৬:৫১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
কোরবানির ঈদ সামনে রেখে সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজার ও ছাতক উপজেলার সীমান্ত এলাকাগুলোতে আবারও বেড়েছে ভারতীয় গরুর চোরাচালান।
সীমান্তে কড়াকড়ি নজরদারি সত্ত্বেও চোরাকারবারিরা নতুন কৌশলে মেঘালয় সীমান্ত পেরিয়ে গরু আনছে। এরপর সেগুলোকে বৈধ কাগজপত্র তৈরি করে দেশের বিভিন্ন পশুর হাটে সরবরাহ করা হচ্ছে।
বিশেষভাবে নির্মিত নৌকা ব্যবহার করে রাতের আঁধারে সুরমা নদীসহ অন্যান্য নদীপথে এসব গরু আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। নৌকার তলদেশে কাঠের পাটাতন ও দু’পাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে গরু পরিবহনের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে আলাদা ব্যবস্থা। সেখান থেকে এসব গরু পাঠানো হচ্ছে নেত্রকোণা, মোহনগঞ্জ, বারহাট্টা ও ধর্মপাশাসহ আশেপাশের হাটে।
বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে দোয়ারা বাজারের সীমান্তবর্তী বোগলা বাজার পশুর হাট। প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ইজারায় নেওয়া এ হাটে নিয়মিত ভারতীয় গরু বৈধতার কাগজপত্র দিয়ে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ১ মে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিজিবি সুরমা নদীর সাহেব বাড়ি ঘাট এলাকা থেকে ৯০টি গরু ভর্তি একটি নৌকা আটক করে। গরুগুলো আটক রেখে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কাছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। তাদের প্রতিবেদনে জানানো হয়, গরুগুলোর শারীরিক বৈশিষ্ট্যে মেঘালয়ের গরুর পরিচয় স্পষ্ট—ছোট পা, ছোট শিং, কপালে দাগ ও মসৃণ পশম।
তবে জব্দ করা গরুগুলোর সঙ্গে হাটের বৈধ কাগজ থাকায় প্রকাশ্যে নিলামে বাধে আইনি জটিলতা। শেষ পর্যন্ত বিজিবি নিয়মিত মামলার মাধ্যমে হাট কর্তৃপক্ষের কাছে গরুগুলো হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়।
গরু নিতে আসা ইজারাদার প্রতিনিধি সুবীর আহমেদ বলেন, “গরুগুলো ভারতীয় হলেও সমস্যা নেই।” অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “এইভাবে ভারতীয় গরু বাজারে প্রবেশ করলে দেশীয় খামারিদের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।”
বাজার ইজারাদার ও জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল আহমেদ বলেন, “বোগলা বাজার একটি ঐতিহ্যবাহী হাট। কিছু লোক বাজারের সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে এমন অভিযোগ করছে।”
তবে আন্দোলনের প্রধান আহ্বায়ক ইমন দোজ্জা জানিয়েছেন, “যদি প্রমাণিত হয় যে ভারতীয় গরুকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে, তাহলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”
এদিকে দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার অন্তত ৩০টি স্পটে রাতে গোপন রুটে চোরাকারবারিরা গরু পাচার করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এসব গরু দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় খামারিরা।
খামারি হৃদয় মিয়া বলেন, “বোগলা বাজার যেভাবে ভারতীয় গরু বৈধ করছে, তাতে দেশি খামারিরা ধ্বংস হয়ে যাবে।”
আরেক খামারি সোনাফর আলী জানান, “দেশি গরু বাজারে এনে আমরা দাম পাচ্ছি না, কারণ ভারতীয় গরুর দাম অনেক কম।”
এ প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল জাকারিয়া কাদির বলেন, “সীমান্ত ঘেঁষা হাট থাকায় চোরাকারবারিরা গরু বৈধ করছে। আমরা হাটটি সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছি এবং ঈদকে সামনে রেখে সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, গত তিন মাসে শুধু দোয়ারা বাজার সীমান্ত এলাকা থেকেই সাড়ে ৪০০ ভারতীয় গরু জব্দ করেছে বিজিবি।
১২৯ বার পড়া হয়েছে