ভদ্রলোকেরাই গুমের মতো ভয়াবহ কাজ করেছে: প্রধান উপদেষ্টা

তিনি বলেন, ‌‘‘এই ঘটনাগুলো আমাদের সমাজের তথাকথিত ‘ভদ্রলোকেরা’ ঘটিয়েছেন। নিজেদেরই আত্মীয়-পরিজন জড়িত ছিলেন এসব নির্মম ঘটনায়। প্রতিটি ঘটনা গা শিউরে ওঠার মতো।’’

বুধবার (৪ জুন) সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গঠিত কমিশনের প্রধান বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে গুমবিষয়ক প্রতিবেদন জমা দেন।

প্রতিবেদন ঘিরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আগ্রহ রয়েছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ওয়েবসাইট ও বই আকারে এই প্রতিবেদন প্রকাশের উদ্যোগ নিতে হবে। এমনকি ঘটনাগুলোর ভয়াবহতা তুলে ধরতে একটি ‘হরর মিউজিয়াম’ গড়ার কথাও ভাবা যেতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “তিন ফুট বাই তিন ফুট বন্দিশালায় মানুষকে মাসের পর মাস আটকে রাখা হয়েছিল এমন নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতা সাধারণ মানুষের জানা দরকার।”

বিচারবিভাগীয় পদক্ষেপে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা কমিশন সদস্যদের বলেন, প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় করণীয়গুলো চিহ্নিত করে কোন বিষয়টি কোন মন্ত্রণালয়ের আওতায় পড়ে, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে— যাতে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে।

কমিশনের এক সদস্য জানান, তদন্তে পাওয়া অনেক ঘটনা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, জড়িত কিছু কর্মকর্তা নিজেরাই অনুশোচনায় ভুগছেন এবং কেউ কেউ আত্মশুদ্ধির উদ্যোগও নিয়েছেন। এমনকি দুইজন কর্মকর্তা তাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে ক্ষমা চেয়ে লিখিত আবেদনও করেছেন, যা গণভবনে পাওয়া গেছে। তৎকালীন সেনাপ্রধান এসব চিঠির কথা স্বীকার করেছেন বলেও জানান তিনি।

এখনো নিখোঁজ তিন শতাধিক ব্যক্তি
কমিশন জানায়, তাদের কাছে এ পর্যন্ত ১,৮৫০টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যার মধ্যে ১,৩৫০টি যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। সদস্যদের মতে, মোট অভিযোগের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এখনো গুম হওয়া তিন শতাধিক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন।

কমিশন প্রধান অনুরোধ করেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার যেন অন্তত ব্যাংকে লেনদেন করতে পারে, সেই ব্যবস্থা নিতে। বর্তমানে সাত বছর নিখোঁজ থাকলে আইন অনুযায়ী মৃত হিসেবে ধরে নেওয়া যায়— এই সময়সীমা কমিয়ে পাঁচ বছরে আনার প্রস্তাবও দেন তিনি।

“ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে কাজ করছেন”
কমিশনের কাজের প্রশংসা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আপনারা ভয়ভীতি, হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশের মানুষ আপনাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পাবে। ভবিষ্যতে যারা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করবে, তারাও আপনাদের পথ অনুসরণ করবে।”