বাজেট বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি: উপদেষ্টার সহকারী

বুধবার, ৪ জুন, ২০২৫ ৫:৪৮ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বাংলাদেশে জাতীয় বাজেট কার্যকর করতে সবচেয়ে বড় অন্তরায় দুর্নীতি এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
তিনি বলেন, "দেশে এমন কোনো খাত নেই যেখানে দুর্নীতি নেই। ফলে বাজেট ঘোষণা করা গেলেও তার বাস্তবায়ন অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।"
মঙ্গলবার (৪ জুন) ঢাকার বনানীর একটি হোটেলে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) আয়োজিত বাজেট পর্যালোচনা আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অ্যামচেম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ।
আনিসুজ্জামান চৌধুরী আরও বলেন, "সরকারি খাতে ঋণ নেওয়া নতুন কিছু নয়। বরং এটি জনগণের জন্য এক ধরনের সঞ্চয়। তবে এসব অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।"
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "সবসময় মূল্যস্ফীতি নেতিবাচক নয়। প্রবৃদ্ধির সময় এটি একটি স্বাভাবিক বিষয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি ইন্দোনেশিয়ার কথা বলেন, যেখানে প্রবৃদ্ধির সময় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ থেকে ১৩ শতাংশ। তবে এটি রাজনৈতিক বিষয়, আর এর সমাধানও রাজনৈতিকভাবেই করতে হবে।"
সংস্কার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, "সংস্কার কঠিন কাজ। এর নির্দিষ্ট কোনো টেক্সটবুক নেই, আবার তাড়াহুড়ো করলেই ভেঙে পড়ার ঝুঁকি থাকে।"
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের কিছু লক্ষ্য অত্যন্ত উচ্চাশাব্যঞ্জক। বিশেষ করে বিদ্যমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, জ্বালানি সংকট ও অভ্যন্তরীণ চাহিদার ঘাটতির মধ্যে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগ ২৪.৩ শতাংশে উন্নীত করা বাস্তবসম্মত নয়।
তিনি আরও বলেন, বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ৬.৫ শতাংশে রাখার লক্ষ্যও অবাস্তব। বাজেটে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার রোডম্যাপের অনুপস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, বাণিজ্য, রাজস্ব এবং জনসেবা খাতে আরও স্পষ্ট পরিকল্পনা দরকার।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন জানান, শিক্ষা খাতে বরাদ্দে বাংলাদেশ বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। তিনি বলেন, “সরকার সামাজিক খাতের চেয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।” তাঁর মতে, দক্ষ মানবসম্পদ গড়তে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ জরুরি।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাজেটে নির্ধারিত ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা। এর চেয়ে দেড় লাখ কোটি বেশি তোলা বাস্তবতাবর্জিত।”
অ্যামচেম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ অবশ্য বাজেটে কিছু ইতিবাচক দিক দেখেছেন। যেমন—প্রণোদনা ব্যবস্থা, কর কাঠামো সংস্কার এবং ব্যাংক খাত উন্নয়নে কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
তবে তিনি শুল্ক ব্যবস্থার দুর্বলতা, নীতির বাস্তবায়নে গাফিলতি এবং ভৌত অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা মোকাবিলায় আরও কার্যকর উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
১১৮ বার পড়া হয়েছে