সর্বশেষ

জাতীয়

শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

বুধবার, ৪ জুন, ২০২৫ ৪:৫৪ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইনের সংশোধিত অধ্যাদেশ, যার মাধ্যমে শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হয়েছে।

৩ জুন ২০২৫ জারি করা অধ্যাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক এমএনএ/এমপিএ (জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য) এবং আরও কয়েকটি শ্রেণির ব্যক্তির মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে। নতুন আইনে এসব নেতাদের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ না বলে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের সদস্য, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক এমএনএ/এমপিএ (জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য), বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে ভূমিকা রাখা পেশাজীবী, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী-কলাকুশলী, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করা সাংবাদিক এবং স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা।

নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, শুধুমাত্র যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে বা ভারতের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে সরাসরি যুদ্ধ করেছেন, তারাই ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে গণ্য হবেন। যাঁরা রাজনৈতিক, কূটনৈতিক বা সাংস্কৃতিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের জন্য অবদান রেখেছেন, তাঁদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিশেষ স্বীকৃতি দেওয়া হবে, তবে তারা আর ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবেন না।

ইতিমধ্যে এই অধ‍্যাদেশের সমালোচনা করে ইতিহাসবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, “আইন বদলে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান পরিবর্তন করা যায় না। এটি অপ্রয়োজনীয় এবং অপচয়মূলক উদ্যোগ। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারীদের স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয়”। মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল মন্তব্য করেছেন, “মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ, কেবল সামরিক যুদ্ধ নয়। এ লড়াইয়ে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ঢালাওভাবে এমএনএ, এমপিএ ও গণপরিষদ সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করা পুনর্বিবেচনা করা উচিত”। বিএনপির পক্ষ থেকেও এই সিদ্ধান্ত ভালোভাবে পর্যালোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সরকার বলছে, মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট করতে এবং ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিলের লক্ষ্যে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। যারা সরাসরি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, শুধু তারাই ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নতুন শ্রেণি তৈরি করে তাদের অবদানকে আলাদা স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে, তবে সরকারি আর্থিক সুবিধা বা কোটায় তারা থাকবেন না।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ব্যক্তিদের স্বীকৃতি বাতিল নিয়ে সামাজিক, রাজনৈতিক ও মুক্তিযোদ্ধা মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। অনেকেই মনে করছেন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী ও কূটনৈতিকভাবে অবদান রাখা ব্যক্তিদের অবদানকে ছোট করা হচ্ছে এবং ইতিহাসের মূল্যায়নে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।

বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট মহল থেকে দীর্ঘদিন ধরেই দাবি ছিল, সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের স্বীকৃতি আলাদা করা হোক এবং অন্যদের অবদানও স্বীকৃতি পাবে, তবে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে নয়।

সংক্ষেপে, এই অধ্যাদেশের প্রয়োজনীয়তা এসেছে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নির্দিষ্টকরণ, অপব্যবহার রোধ এবং প্রকৃত যোদ্ধাদের সম্মান ও সুযোগ-সুবিধা সংরক্ষণের জন্য।

এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্মৃতি ও রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও স্বীকৃতি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

১২৩ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ সব খবর
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন