বিনিয়োগ স্থবির, কঠিন হবে ব্যবসা-বিনিয়োগ

মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫ ৬:৪৩ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বর্তমান বাজেটে বেসরকারি খাতের উন্নয়নে যথাযথ নীতি সহায়তার অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, উচ্চ সুদের কারণে কাঙ্ক্ষিত ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না।
ডলারের ঊর্ধ্বমুখী দামে আমদানিতে খরচ বেড়ে যাওয়ার ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। এর মধ্যেও করের বোঝা বাড়ানো হয়েছে, যা ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বাজেটে বিদেশি পণ্যের আমদানি সহজ করার মাধ্যমে দেশের স্বয়ংসম্পূর্ণ শিল্প খাতগুলোর জন্য অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মাছ, মাংস, প্লাস্টিক, পোশাক ও জুতার আমদানি সহজ করায় স্থানীয় উৎপাদনের ওপর চাপে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত ডলার সংকটকে আরও জটিল করবে এবং দেশের কারখানাগুলোর ক্রমবর্ধমান বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়াবে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট ঘোষণায় বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার কথা বলেছেন। কিন্তু বিনিয়োগ সম্মেলনে মাত্র ১৫ কোটি ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি হওয়া এবং স্টার্টআপে ১১ কোটি ডলারের বিনিয়োগ আসা বাংলাদেশের সম্ভাবনার তুলনায় খুবই সামান্য। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার কোনও স্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেই বলেও অভিযোগ উঠেছে।
কর প্রশাসনে কোনো বড় ধরনের সংস্কার না করায় নিয়মিত করদাতাদের ওপরই চাপ বাড়বে বলে ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ভর্তুকি কমানোর প্রস্তাব উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে, যা শিল্পকে টিকে থাকা কঠিন করে তুলবে।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) এর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘বর্তমান বাজেটে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার জন্য কোনো কার্যকর নির্দেশনা নেই। সঞ্চয় ও বিনিয়োগ হ্রাস পাওয়ায় কর্মসংস্থানের সংকট তৈরি হবে।’ ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ ও সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহমানও বাজেটের সমালোচনা করে বলেছেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সুস্পষ্ট নীতি না থাকায় আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
অটোমোবাইল খাতে শুল্ক বাড়ানো, টার্নওভার কর বৃদ্ধি এবং মোবাইল উৎপাদনে ভ্যাট বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপ ব্যবসায়ীদের জন্য আরও চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, এই বাজেট থেকে প্রয়োজনীয় প্রণোদনা ও নীতিগত সহায়তা না পেলে বেসরকারি খাতের অবস্থা আরও নাজুক হবে।
মোটকথা, বর্তমান বাজেটে বেসরকারি খাতের উন্নয়নের কোনো নির্দিষ্ট রোডম্যাপ না থাকায় বিনিয়োগ ও শিল্পোন্নয়ন কর্মকাণ্ড তলানিতে ঠেকে গেছে। আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং অর্থনীতিকে গতিশীল করতে ব্যর্থ হওয়ায় দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ অবনতি হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
১৩৮ বার পড়া হয়েছে