যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাজ্য, ঘোষণা দিলেন স্টারমার

মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫ ৩:০১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকা অস্থিরতা, রাশিয়ার আগ্রাসী ভূমিকায় এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নিজ দেশকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাখতে চায় যুক্তরাজ্য।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সম্প্রতি স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে দেওয়া এক ভাষণে এমন ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিশ্ব এখন এমন এক অনিশ্চিত অবস্থার মুখে, যা স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। রাশিয়ার পারমাণবিক হুমকি, ইউরোপে চলমান যুদ্ধ, সাইবার হামলা এবং ব্রিটিশ আকাশ ও সমুদ্রে রুশ তৎপরতা—সব মিলিয়ে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার করা জরুরি হয়ে উঠেছে।
নতুন প্রতিরক্ষা কৌশল ও বিশাল বিনিয়োগ
নতুন কৌশলের অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্য ১২টি আক্রমণাত্মক সাবমেরিন নির্মাণ, পারমাণবিক অস্ত্র এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জামে বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। পাশাপাশি তৈরি করা হবে একটি নতুন সাইবার কমান্ড এবং ডিজিটাল সক্ষমতা বাড়াতে আরও এক বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করা হবে।
সাবেক ন্যাটো মহাসচিব জর্জ রবার্টসনের নেতৃত্বে প্রতিরক্ষা নীতিমালা পুনর্মূল্যায়ন চলছে। এর আওতায় সাত হাজার দূরপাল্লার অস্ত্র সংগ্রহ, গোলাবারুদ মজুত বৃদ্ধি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ড্রোন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বর্তমানে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে জনবল নেপোলিয়নের সময়ের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় সেনা সদস্যদের আবাসন উন্নয়নে অতিরিক্ত এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ দেওয়া হবে।
জিডিপির ২.৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিকল্পনা
প্রধানমন্ত্রী স্টারমার জানিয়েছেন, প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়িয়ে জিডিপির ২.৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে। এই অর্থের একটি অংশ বিদেশি সহায়তা বাজেট থেকে হ্রাস করে সংগ্রহ করা হতে পারে। তবে এটি ৩ শতাংশে উন্নীত করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা এখনো নির্ধারিত হয়নি।
চীন মোকাবিলায় সাবমেরিন জোট ও পারমাণবিক কৌশল
যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে 'AUKUS' জোটের অধীনে নির্মাণ হবে নতুন সাবমেরিন, যা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ব্যবহৃত হবে। সরকার এটিকে ইউরো-আটলান্টিক নিরাপত্তা কাঠামোয় এক ‘গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
পর্যালোচনায় পারমাণবিক অস্ত্রবাহী যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ছায়া থেকে যুক্তরাজ্যের নির্ভরতা কমাতে পারে।
এই কৌশলকে ঘিরে দেশটির রাজনীতিতে আলোচনা শুরু হয়েছে। সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও লিবারেল ডেমোক্র্যাট এমপি মাইক মার্টিন মন্তব্য করেছেন, যুক্তরাজ্যের নতুন প্রতিরক্ষা দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করে যে দেশটি আর পুরোপুরি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করতে পারছে না। পারমাণবিক অস্ত্রবাহী যুদ্ধবিমান কেনার চিন্তা এই সন্দেহ আরও জোরদার করেছে।
স্টারমার অবশ্য ন্যাটো ও ট্রান্স-আটলান্টিক সহযোগিতার প্রতি যুক্তরাজ্যের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তবে তাঁর এই ঘোষণা এমন সময়ে এসেছে, যখন ইউক্রেন যুদ্ধ আরও বিস্তৃত হচ্ছে এবং রুশ ভূখণ্ডে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় একাধিক বিমানঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
১১৭ বার পড়া হয়েছে