সর্বশেষ

জাতীয়

নতুন অর্থবছরের বাজেট: স্থিতিশীল অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ‘বিনিয়োগ’

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

সোমবার, ২ জুন, ২০২৫ ৮:৫০ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
টানা মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ স্থবিরতা এবং কর্মসংস্থানের সংকটে বিপর্যস্ত দেশের অর্থনীতি। কোভিড-পরবর্তী সময়ে কিছু সামষ্টিক সূচকে স্থিতিশীলতা এলেও এর সুফল এখনও পৌঁছেনি সাধারণ মানুষের জীবনে। এমন এক বাস্তবতায় আজ সোমবার পেশ হচ্ছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশে—কোভিডের সময় বাদ দিলে গত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। বিনিয়োগ কমেছে এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। মূল্যস্ফীতি টানা তিন বছর ধরে ১০ শতাংশের কাছাকাছি। মজুরি বৃদ্ধির হার দীর্ঘ ৩৯ মাস ধরে মূল্যস্ফীতির নিচে থাকায় প্রকৃত আয় কমেছে মানুষের।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘ মেয়াদে এই প্রবণতা দেশের দারিদ্র্য, বৈষম্য ও সামাজিক অস্থিরতা বাড়িয়ে দিতে পারে। একইসঙ্গে বিনিয়োগ কমে যাওয়া কর্মসংস্থানের সংকটকে আরও গভীর করেছে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৯ মাসে দেশে ৬০ হাজারের বেশি শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে মোট বিনিয়োগের হার দাঁড়াবে জিডিপির ২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশে, যা ২০১৩-১৪ সালের পর সর্বনিম্ন। মোট দেশজ সঞ্চয়ও ধারাবাহিকভাবে কমছে। এতে বোঝা যায়, মানুষ আয় কম পাচ্ছে বা যা পাচ্ছে তাও খরচ হয়ে যাচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে। প্রাতিষ্ঠানিক আস্থা কমে যাওয়ায় ব্যাংকেও অর্থ রাখার প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে।

এ অবস্থাকে উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁদের মতে, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো ছাড়া অর্থনীতির বর্তমান স্থিতিশীলতা ধরে রাখা যাবে না।

অর্থনীতিবিদ ও শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “অর্থনীতি যে অনেকটাই স্থিতিশীলতার দিকে সংহত হয়েছে, সেটি সত্য। তবে প্রশ্ন হলো, এই স্থিতিশীলতা ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে পারবে কি না। মূল চ্যালেঞ্জ এখন এটাই।”

অন্তর্বর্তী সরকার একটি দুর্বল অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। রিজার্ভ কমা, টাকার দরপতন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির মতো সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাদের। তবে রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি এবং রিজার্ভের পতন থামাতে সক্ষম হয়েছে সরকার। ডলারের দর কিছুটা স্থির হয়েছে, হুন্ডির প্রবাহ কমেছে বলেও ধারণা।

তবে দেশীয় অর্থনীতির ভিত এখনো নড়বড়ে। ব্যাংক খাত এখনো ভঙ্গুর। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি মাত্র ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিদেশি বিনিয়োগও আশঙ্কাজনক হারে কমেছে।

বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় ৪ শতাংশ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে কৃষি, শিল্প ও সেবা—সব খাতেই। নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। একই সময়ে নিম্ন দক্ষতার শ্রমিকদের মজুরি ২ শতাংশ এবং উচ্চ দক্ষতার শ্রমিকদের মজুরি কমেছে ০.৫ শতাংশ। এতে আয় বৈষম্য বেড়েছে এবং প্রায় ৩০ লাখ মানুষ নতুন করে চরম দারিদ্র্যে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নতুন বাজেট পেশের আগেই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে—ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে সরকার বাস্তবায়নের সময় পাবে মাত্র ছয় মাস, আর জুনে নির্বাচন হলে পুরো বাজেট বাস্তবায়নের দায়িত্ব পড়বে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর।

এ প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজেটে ব্যয় সংযত রাখা এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “যদি সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ ও টাকার ছাপানোর প্রবণতা না কমে, তাহলে সামষ্টিক স্থিতিশীলতাও টিকবে না।”

অর্থনীতির কিছু সূচকে ইতিবাচক পরিবর্তন এলেও তা টেকসই করতে প্রয়োজন সুসংগঠিত আর্থিক ব্যবস্থা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সুশাসন। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও জ্বালানিসংকট নিরসনের পাশাপাশি ব্যাংক খাতকে আরও শক্তিশালী না করা গেলে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ আসবে না।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, "নতুন বাজেটে মূল ফোকাস হতে হবে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি। অন্যথায় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাও অস্থির হয়ে পড়বে।"

১৩০ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ সব খবর
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন