গাজায় নয় সন্তান হারানো চিকিৎসক বাবারও মৃত্যু

সোমবার, ২ জুন, ২০২৫ ৭:০০ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
গাজা উপত্যকার খান ইউনুস শহরের চিকিৎসক হামদি আল-নাজ্জারের জীবন থেমে গেল।
যিনি কয়েকদিন আগে এক ভয়াবহ ইসরায়েলি হামলায় তার নয়টি সন্তানের লাশ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন, এবার তিনি নিজেই জীবনযুদ্ধ হেরে গেলেন।
এই হৃদয়বিদারক খবর নিশ্চিত করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। হামলার দিন তার বাড়িতে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় নয়টি সন্তানই নিহত হয়। তিনি নিজেও গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মাথায় ও শরীরজুড়ে আঘাত, ভাঙা হাড়—চিকিৎসকদের চেষ্টার পরও তাকে বাঁচানো গেল না।
ডা. হামদি আল-নাজ্জার ছিলেন ৪০ বছর বয়সী এক নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসক, বহু বছর ধরে নাসের হাসপাতালে সেবা দিয়ে আসছিলেন। একজন চিকিৎসক হিসেবে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন মানুষের প্রাণ বাঁচাতে, অথচ নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে পারেননি।
সেই হামলায় বেঁচে ছিল মাত্র দুজন—হামদি নিজে এবং তার ১১ বছর বয়সী ছেলে আদাম। আদাম এখনো চিকিৎসাধীন। আর তার মা, ডা. আলা আল-নাজ্জার—নিজেও একজন শিশু চিকিৎসক—সেদিন হাসপাতালের ডিউটিতে ছিলেন। নিজের সন্তানদের পুড়ে যাওয়া মরদেহ একে একে হাসপাতালের মর্গে দেখে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। তারপর স্বামীর শয্যার পাশে থেকেছেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।
ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আদামকে চিকিৎসার জন্য নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তার মাকেও আশ্রয়ের প্রস্তাব দিয়েছে তারা। তবে আলা বলেছিলেন, যতদিন স্বামী বেঁচে আছেন, তিনি তার পাশে থাকবেন। এখন স্বামীরও মৃত্যু হলো।
এই মৃত্যু শুধুই একটি প্রাণহানির খবর নয়—এটি একটি পরিবারের সম্পূর্ণ ধ্বংসের প্রতীক, একটি সমাজের চলমান ট্র্যাজেডির প্রতিফলন। প্রতিদিন গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসছে এমন শত শত করুণ গল্প, যা শুধু সংখ্যা নয়—একেকটি হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন, ভেঙে পড়া পরিবার, থেমে যাওয়া জীবনের নামান্তর।
ডা. হামদি সেই শহরের জন্য কাজ করেছিলেন, যেটি তার কাছ থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছু কেড়ে নিল—তার সন্তান, পরিবার, আর অবশেষে তার জীবন।
১৩৩ বার পড়া হয়েছে