সর্বশেষ

মতামত

বিচারকার্য সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার নজিরবিহীন ঘটনা

মনজুর এহসান চৌধুরী
মনজুর এহসান চৌধুরী

রবিবার, ১ জুন, ২০২৫ ৩:১৭ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো ট্রাইবুনালের বিচারকার্য সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছে। ২০২৫ সালের ১ জুন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল (International Crimes Tribunal) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানি সরাসরি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভিতে সম্প্রচার করে, যা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা।

রবিবার টিভির পর্দায় বাংলাদেশ নয় সমগ্র বিশ্বে দেখেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন ও শুনানি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের বিচারকদের বক্তব্য ও সিদ্ধান্ত। সরকারি ও প্রসিকিউশনের বক্তব্য এবং মামলার প্রাথমিক পর্যায়ের বিচারিক কার্যক্রম।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আদালতের বিশেষ বিচারকার্য (বিশেষত উচ্চ-প্রোফাইল বা জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা) টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের নিয়ম ও চর্চা বিদ্যমান।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে আদালতের কার্যক্রম সম্প্রচারের অনুমতি রয়েছে, বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্ট ও ফেডারেল কোর্ট বাদে অনেক রাজ্য আদালতে ক্যামেরা প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়। কিছু বিখ্যাত মামলা যেমন O.J. Simpson ট্রায়াল সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছিল। তবে ফেডারেল কোর্টে সাধারণত ভিডিও সম্প্রচারের অনুমতি সীমিত, তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে (যেমন COVID-19 মহামারির সময়) অডিও সম্প্রচারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট ও কিছু আপিল আদালতে বিচারকার্য সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা রয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের আপিল কোর্টের বিচারকার্য টিভিতে সম্প্রচার শুরু হয়। তবে নিম্ন আদালতে (যেমন ম্যাজিস্ট্রেট বা ক্রাউন কোর্ট) সাধারণত ক্যামেরা নিষিদ্ধ।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০১৮ সালে ঐতিহাসিক রায়ে বিচারকার্য সরাসরি সম্প্রচারের নীতিগত অনুমোদন দেয়। ২০২২ সাল থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি সরাসরি সম্প্রচার শুরু হয়েছে। তবে সমস্ত আদালতে নয়, নির্বাচিত গুরুত্বপূর্ণ মামলাতেই এই সুবিধা সীমিত।

কানাডার সুপ্রিম কোর্টের শুনানি সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।

অস্ট্রেলিয়ার কিছু রাজ্যে ও উচ্চ আদালতে সীমিত পরিসরে বিচারকার্য সম্প্রচারের অনুমতি রয়েছে।

নিউজিল্যান্ডের সুপ্রিম কোর্ট ও উচ্চ আদালতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলা সরাসরি সম্প্রচার বা অনলাইনে স্ট্রিমিং করা হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১৪ সালে ওস্কার পিস্টোরিয়াসের মামলাটি আদালতের অনুমতিতে টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার হয়েছিল, এবং এরপর থেকে কিছু বিশেষ মামলায় এই চর্চা অব্যাহত আছে।

ব্রাজিল দেশটির সুপ্রিম ফেডারেল কোর্টের কার্যক্রম সরাসরি টিভি চ্যানেল (TV Justiça) ও অনলাইনে সম্প্রচার করা হয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু দেশে ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিসের শুনানি ও রায় ঘোষণার সময় লাইভ স্ট্রিমিং বা ভিডিও সম্প্রচারের ব্যবস্থা রয়েছে।

চীনে কিছু উচ্চ-প্রোফাইল মামলার বিচারকার্য (বিশেষ করে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট) অনলাইনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়, যদিও এটি খুব সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত।

এছাড়া ভিডিও লাইভস্ট্রিম দেখানো হয় পাকিস্তান, মেক্সিকো, ইসরাইলসহ আরো অনেক দেশে।
অধিকাংশ দেশে আদালতের নিজস্ব ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল, বা সরকারি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে সম্প্রচার হয়। এসব সম্প্রচারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিচারিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধি ও জনসচেতনতা তৈরি। বিচারক বা আদালতের অনুমতি ছাড়া অধিকাংশ দেশে সরাসরি সম্প্রচার সম্ভব নয়, এবং অনেক সময় নির্দিষ্ট শর্ত আরোপ করা হয়।

যুক্তরাজ্য, কানাডা, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো, ও ইসরায়েলসহ আরও কিছু দেশের উচ্চ আদালতে বিচারকার্য সরাসরি সম্প্রচার করা হয়, এবং সাধারণত সংবিধানিক, জনস্বার্থ বা উচ্চ-প্রোফাইল মামলাগুলোই সম্প্রচারের আওতায় পড়ে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আদালতের বিশেষ বিচারকার্য সরাসরি সম্প্রচারের নিয়ম ও চর্চা আছে, তবে তা সাধারণত আদালতের অনুমতির ওপর নির্ভরশীল এবং সব দেশে বা সব আদালতে এটি বাধ্যতামূলক নয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া—এ ধরনের দেশগুলোতে নিয়ন্ত্রিত ও সীমিত পরিসরে বিচারকার্য সম্প্রচারের ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশের মতো দেশে এটি একটি ব্যতিক্রমী ঘটনার যাত্রা শুরু হলো।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট 

১২৭ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ সব খবর
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন