ত্রাণ সংগ্রহে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি, নিহত অন্তত ৫০

রবিবার, ১ জুন, ২০২৫ ২:০৭ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
দক্ষিণ গাজার রাফাহর পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায় ত্রাণ সংগ্রহে আসা সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী।
রোববার ভোরে এই ঘটনায় অন্তত ৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, নিহতদের মধ্যে ২৮ জনের মরদেহ খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে এবং ২১ জনের মরদেহ রেড ক্রস পরিচালিত ফিল্ড হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। আহতদের অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছান।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, মার্কিন বেসরকারি সংস্থা ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ পরিচালিত একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ভোর থেকেই মানুষের ভিড় ছিল। তবে কেন্দ্রটির কাছাকাছি পৌঁছানোর পরই ইসরাইলি সামরিক যানবাহন থেকে গুলি চালানো হয়। পাশাপাশি ড্রোন থেকে বিস্ফোরকও নিক্ষেপ করা হয়, যার ফলে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যায়।
এক চিকিৎসাকর্মী বলেন, “ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের আশপাশের পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। টানা গুলিবর্ষণের কারণে আহতদের কাছে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছাতে পারেনি। অনেককে ঠেলাগাড়ি ও হেঁটে সরিয়ে আনতে হয়েছে।”
এ সময় গাজার কেন্দ্রস্থল নেটজারিম করিডোর সংলগ্ন আরেকটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রেও ইসরাইলি বাহিনী গুলি চালায় বলে জানিয়েছেন আরও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী।
এদিকে, বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের কাছে ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে একজন নিহত এবং অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের আল-আউদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র অভিচাই আদ্রেয়ি দাবি করেছেন, ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে তাদের বাহিনীর গুলিতে হতাহতের কোনো তথ্য নেই। তিনি বলেন, “ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে।”
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে জানায়, “ইসরাইল পরিকল্পিতভাবে ত্রাণকে একটি যুদ্ধাস্ত্রে পরিণত করেছে, যাতে অনাহারগ্রস্ত বেসামরিকদের ব্ল্যাকমেইল করে নির্দয় হত্যাযজ্ঞের স্থানে আনা যায়।”
এ পরিস্থিতির মধ্যেই তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এক প্রতিবেদনে জানায়, ইসরাইল দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় চারটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হলো গাজার উত্তর অংশকে জনশূন্য করে ফেলা।
ইসরাইলি সেনা রেডিওর তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন সমর্থিত এই ত্রাণ পরিকল্পনার মাধ্যমে উত্তর গাজা থেকে বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরিয়ে নিতে চায় ইসরাইল, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনার মুখে পড়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২ মার্চ থেকে গাজার সব সীমান্ত পয়েন্ট বন্ধ করে দেয় ইসরাইল। এতে খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও, ২৪ লাখ মানুষের এই ভূখণ্ডে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা জোরালো হচ্ছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর সামরিক অভিযান চলমান রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যে, এ পর্যন্ত অন্তত ৫৪,৪০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলছে, প্রকৃত নিহতের সংখ্যা ৬১,৭০০-এর বেশি, এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও হাজারো নিখোঁজ মানুষ মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। একইসঙ্গে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার অভিযোগে মামলাও চলছে।
১১১ বার পড়া হয়েছে