কোরবানির পশু কিনতে সাবধান: কৃত্রিম মোটাতাজাকরণে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

শনিবার, ৩১ মে, ২০২৫ ৮:০৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
আরও কিছুদিন পরই মুসলিম উম্মাহর অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির উদ্দেশ্যে গবাদিপশু কেনাকাটায় সরব হয়ে উঠেছে দেশের পশুর হাটগুলো।
কিন্তু এরই মধ্যে উঠেছে উদ্বেগ—অসাধু ব্যবসায়ীদের কৃত্রিমভাবে গরু মোটাতাজা করার অপচেষ্টা।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন ও প্রাণী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান জানিয়েছেন, অধিক মুনাফার আশায় একশ্রেণির খামারি পশুকে কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করতে ডেক্সামিথাসন, প্রেডনিসোলনের মতো ক্ষতিকর স্টেরয়েড ইনজেকশন প্রয়োগ করেন। ফলে এসব পশুর বাহ্যিক আকৃতি আকর্ষণীয় হলেও অভ্যন্তরীণভাবে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
কৃত্রিম মোটাতাজাকরণে কী ধরনের সমস্যা হয়?
এই ইনজেকশন প্রয়োগে পশুর যকৃৎ, কিডনি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব গরুর মাংস খেলে মানুষের শরীরে পানি জমা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, হরমোন ভারসাম্যহীনতা ও দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার ঝুঁকি থাকে।
কীভাবে চেনা যাবে কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা গরু?
অধ্যাপক বাহানুর জানান, এ ধরনের গরুর নাক সাধারণত শুকনো থাকে এবং শরীর থলথলে ও পানিশূন্য দেখায়। হাঁটতে গেলে সহজেই হাঁপিয়ে পড়ে ও ঘন ঘন শ্বাস নেয়। জাবর কাটে না, খাওয়ার আগ্রহ কম, মুখে অতিরিক্ত লালা ঝরে—কখনো তা ফেনাযুক্তও হতে পারে।
গরুর শরীরের মাংসে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে সেই অংশ দেবে যায় এবং আগের অবস্থায় ফিরতে সময় লাগে। রানের মাংস অস্বাভাবিকভাবে নরম থাকে, হাড়ও দুর্বল হয়ে যায়, যা যেকোনো দুর্ঘটনায় সহজেই ভেঙে যেতে পারে।
সুস্থ গরু চিনবেন যেভাবে
সুস্থ গরুর নাকের ওপরের অংশ থাকবে ভেজা, ত্বক টানটান এবং চঞ্চল স্বভাবের হবে। তারা খাবার দেখলে খেতে আগ্রহ দেখায়, নিয়মিত জাবর কাটে এবং ত্বকে সেনসেশন থাকে। গায়ের চামড়ায় কোনো দাগ না থাকা, চামড়ায় চাপ দিলে দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরে আসা—এগুলোও সুস্থতার লক্ষণ।
গরুর তাপমাত্রা নির্ণয়ে মলাশয়ের তাপমাত্রা আদর্শ হলেও হাটে সহজ উপায় হিসেবে কানের গোড়ায় হাত দিয়ে বুঝে নেওয়া যায়। গরম লাগলে স্বাভাবিক, কিন্তু খুব বেশি গরম অনুভব হলে সতর্ক হওয়া উচিত।
খামারিদের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা
অধ্যাপক বাহানুর বলেন, অনেক খামারি হাতুড়ে ডাক্তারদের ফাঁদে পড়ে পশুকে ইনজেকশন দিয়ে মোটাতাজা করেন, যা পশুর জীবন হুমকিতে ফেলে। খামারিদের প্রতি তার পরামর্শ—প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজাকরণ করুন এবং প্রয়োজনে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিন।
কোরবানির উদ্দেশ্যে পশু কেনার সময় শুধু বাহ্যিক আকর্ষণ নয়, নজর দিন পশুর প্রকৃত স্বাস্থ্যের দিকেও। সচেতন থাকলে আপনার কোরবানি যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ হবে, তেমনি পরিবার-পরিজনের জন্য স্বাস্থ্যকরও হবে।
১২৬ বার পড়া হয়েছে