সর্বশেষ

জাতীয়

জোয়ারে উপকূলে দুর্যোগ, নোনাপানি ঢুকে কৃষির বড় ক্ষতির শঙ্কা

মুন্সী তরিকুল ইসলাম, ঢাকা
মুন্সী তরিকুল ইসলাম, ঢাকা

শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫ ৪:২১ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
ভারী বর্ষা ও জোয়ারের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলগুলো দুর্যোগের মুখে পড়েছে, বাঁধ ভেঙে নদীর নোনা পানি প্রবেশ করায় কৃষিকাজের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সারাদেশে ব্যাপক বৃষ্টিপাত চলছে। এতে নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেয়ে দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা পানির নিচে ডুবে গেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বরগুনার বড়ইতলা ফেরিঘাট থেকে তোলা ছবি অনুযায়ী, বাড়িঘর হাঁটু থেকে কোমর পানের পানিতে ডুবেছে। গ্রামাঞ্চলের সড়ক ও ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। পুকুর ও মাছের খামার ভেসে গেছে, আবার অনেক বাঁধ ভেঙে গেছে এবং নদীর প্রবাহ আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। ফলে নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে, লাখো মানুষ বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে। এসব পরিস্থিতি দেশের উপকূলীয় ১৪টি জেলায় দেখা দিয়েছে।

উপকূলীয় এলাকার লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন অঞ্চলের গভীর নিম্নচাপটি ইতিমধ্যে উপকূল অতিক্রম করে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া দিয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হয়েছে। অমাবস্যার কারণে জলোচ্ছ্বাসের ফলে উপকূলীয় জেলাগুলোতে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে।

রাজধানীতেও বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মিরপুর, মহাখালী, বিমানবন্দর রোড, শ্যামলী ও গাবতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক যানজটের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার শুরু হওয়া লঘুচাপটি ধীরে ধীরে গভীর নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে, যার ফলে ভোর থেকেই ভারী বৃষ্টিপাত চলছে। ঝোড়ো হাওয়াসহ নদনদীর পানি ফুঁসতে শুরু করেছে। রাত পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, ঝোড়ো জোয়ারের কারণে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে ১ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস দেখা গেছে।

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ জানিয়েছেন, বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা নেই। তবে ২৪ মে টেকনাফ থেকে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করছে, যা এখনও সক্রিয়। এই বায়ুর কারণে খুব বেশি গতি বা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও শনিবার পর্যন্ত ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজধানীতেও অব্যাহত বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বৃষ্টি চলেছে। ফলে রাস্তাগুলো জলমগ্ন হয়ে গেছে, যানবাহন চলাচল কমে গেছে, হাঁটুর নিচে পানি জমে গেছে। দোকানপাটে পানি ঢুকছে, যার ফলে ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যানজটের কারণে রিকশা ও অটোরিকশার ভাড়া তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশন দ্রুত জলাবদ্ধতা মোকাবেলায় কন্ট্রোল রুম চালু করেছে, যেখানে ১৬১০৬ নম্বরে তথ্য দিতে বলা হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানাচ্ছে, ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে অনেক এলাকা পানির নিচে ডুবে গেছে। উপকূলীয় এলাকায় খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা সচল রয়েছে।

নিম্নচাপ ও জোয়ারের কারণে উপকূলের বিভিন্ন এলাকা ভয়াবহ প্লাবনে প্লাবিত হয়েছে। নোয়াখালীর নিম্নাঞ্চল জোয়ারে ডুবে গেছে, হাতিয়া ও মহেশখালীতে নৌযোগাযোগ বন্ধ। কক্সবাজারের মহেশখালীতে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জোয়ারের পানিতে অর্ধশতাধিক ঘর ও ট্রলার বিধ্বস্ত হয়েছে।

বরগুনার পায়রা ও বিষখালী নদে পানি বিপৎসীমার ওপরে চলে গেছে। ফলে অনেক ফেরি চলাচল বন্ধ, নদীর পাড়ের গ্রামগুলো প্লাবিত। পায়রা নদীর পাড়ের বেশ কিছু গ্রাম বন্যার কবলে পড়েছে। পিরোজপুরে নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে, ফলে চরাঞ্চল ও গ্রামগুলো প্লাবিত।

বিভিন্ন এলাকা থেকে জানানো হচ্ছে, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, ও ডুবে গেছে অনেক রাস্তা। আশাশুনি, সাতক্ষীরা ও লক্ষ্মীপুরের কিছু অংশে জোয়ারের কারণে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে সাতক্ষীরায় রিং বাঁধ ভেঙে চিংড়ি চাষের ক্ষতি হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে ২০টি গ্রাম পানির নিচে চলে গেছে, নদীর নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন।

চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় নদীর ভাঙনে কৃষি ও মাছের খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভোলার চরফ্যাসন ও অন্যান্য এলাকা ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত। বিভিন্ন স্থানে গাছ পড়ে সড়ক ভেঙে গেছে, পাকা রাস্তা ধসে পড়েছে।

নৌ ও ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় অভ্যন্তরীণ নৌপথে যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। স্বাভাবিক জনজীবন ও যোগাযোগ ক্ষতিগ্রস্ত।

অন্যদিকে, দেশের ছয় জেলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ফেনী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোণায় ভারী বর্ষণের কারণে আগামী দুই দিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

১৮৩ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন