রাজধানীর সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি যানজট, নাজেহাল নগরবাসী

বুধবার, ২৮ মে, ২০২৫ ৩:৪৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়কে বছরের পর বছর চলতে থাকা উন্নয়নকাজ এবং খোঁড়াখুঁড়ি কার্যত নগরবাসীর দুর্ভোগের আরেক নাম হয়ে উঠেছে।
বিশেষ করে শ্যামলী থেকে গাবতলী ও কল্যাণপুরমুখী সড়কে চীনের সঙ্গে যৌথভাবে বাস্তবায়িত হাইভোল্টেজ বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশন প্রকল্পের কারণে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে প্রতিদিনই যানজটে দুর্বিষহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন শহরের মানুষ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শ্যামলী থেকে গাবতলী সড়কের পাশে চলছে ডিপিডিসির অধীনে ‘জি-টু-জি’ প্রকল্পের আওতায় মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের কাজ। এই প্রকল্পের মূল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চীনা কোম্পানি টিবিএ। রাস্তার ওপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে পাইপ, কেবল ও অন্যান্য সরঞ্জাম। ফলে অনেক জায়গায় ফুটপাত বন্ধ হয়ে পড়েছে, আর কাটা সড়কের অংশগুলো এখনও খোলা পড়ে থাকায় সংকুচিত হয়ে গেছে যান চলাচলের পথ। এতে একটু গাড়ির চাপেই সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।
শ্যামলী-কল্যাণপুর সড়কের পাশের খননকাজ ও অগোছালো সরঞ্জামের কারণে রাস্তার যাত্রীরা পড়েছেন মারাত্মক বিপাকে। গাড়ির জন্য ফুটপাতে অপেক্ষা করার সুযোগ নেই, বাধ্য হয়ে মূল সড়কে দাঁড়িয়ে গাড়িতে উঠতে হচ্ছে। এতে করে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও।
আলিফ পরিবহনের এক হেলপার মো. প্রিন্স বলেন, “আগে যেখানে ৫ মিনিটে ইউটার্ন নেওয়া যেত, এখন সেখানে আধাঘণ্টা লাগছে। যানজটের কারণে আমাদের প্রতিদিনের ট্রিপও কমে গেছে।”
একই অভিযোগ করেন সাভার পরিবহনের হেলপার শামীম। তিনি বলেন, “শ্যামলী থেকে গাবতলী যেতে এখন এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। আগে এতটা যানজট হতো না। রাস্তায় কাটা কাজের জন্য কামাই-রোজগার অনেক কমে গেছে।”
গাড়ির অপেক্ষায় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী এরশাদ বলেন, “ফুটপাতে ওঠার কোনো সুযোগ নেই। সব জায়গায় পাইপ আর কেব্ল ফেলে রাখা। বাধ্য হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েই গাড়ি ধরতে হচ্ছে।”
প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে চীনা কোম্পানি টিবিএ’র বাংলাদেশ অফিসের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার দ্বীন আমিন জানান, “২০১৭ সালে এ প্রকল্প শুরু হয়। ১৭০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। মূল মেয়াদ ছিল ২০২৫ সাল পর্যন্ত, তবে সিটি করপোরেশনের অসহযোগিতার কারণে সময় বাড়িয়ে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজধানীজুড়ে ৫৫টি সাব-স্টেশন নির্মিত হচ্ছে, যার মাধ্যমে তৈরি হবে একটি ইন্টার-কানেকটেড পাওয়ার নেটওয়ার্ক। এতে কোনো দুর্যোগ হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হবে না।”
যদিও এই প্রকল্প শহরবাসীর জন্য দীর্ঘমেয়াদে সুফল বয়ে আনবে বলে দাবি করা হচ্ছে, তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা স্বীকার করেছেন যে বর্তমানে কিছুটা জনদুর্ভোগ হচ্ছে। প্রকৌশলী দ্বীন আমিন বলেন, “বৃহৎ কোনো কিছু করতে গেলে সাময়িক দুর্ভোগ হবেই। আমরা এজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। আগামী ৩০ বছর বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হবে, তাই এখন ৩০ দিন একটু কষ্ট স্বীকার করুন।”
তিনি আরও জানান, চলমান খননকাজ মে মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে শেষ করে শ্যামলী এলাকায় রাস্তা পুনরায় উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
১২২ বার পড়া হয়েছে