ঈদুল আযহা সামনে, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে কামারদের ব্যস্ততা তুঙ্গে

মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০২৫ ১২:০৯ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় কামার শিল্পীদের মধ্যে ব্যস্ততা তুঙ্গে পৌঁছেছে।
কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার যন্ত্রপাতি তৈরিতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন তারা। উপজেলার বিভিন্ন কামারশালাগুলো টুং-টাং হাতুড়ির শব্দে এখন মুখরিত।
উপজেলার কামারদের একটি বড় অংশই হিন্দু সম্প্রদায়ের। সারাবছর তুলনামূলকভাবে কম কাজ থাকলেও ঈদুল আযহার সময়টায় তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। কামারপাড়াগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, কেউ দা বানাচ্ছেন, কেউ বটি শান দিচ্ছেন, কেউ আবার ক্রেতার অর্ডার অনুযায়ী ছুরি ও কোদাল তৈরি করছেন।
দামের সীমা ৩শ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত
চাহিদা অনুযায়ী তৈরি হচ্ছে দা, বটি, ছুরি, চাপাতি, কোদাল, কুড়াল, হাসুয়া সহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি। লোহা ও অন্যান্য উপকরণের গুণমান অনুযায়ী এসব যন্ত্রপাতির মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ঈদ এলে রোজগার বাড়ে, কিন্তু বছরের বাকিটা কর্মহীনতা
উপজেলার সদর ইউনিয়নের কামারশিল্পী শ্রী প্রসান্ত কর্মকার জানান, তার পরিবার তিন পুরুষ ধরে এই পেশায় জড়িত। তিনি বলেন, "আমার বাবা জিতেন কর্মকার নব্বই বছর বয়স পর্যন্ত এই পেশায় ছিলেন। এখন তিনি আর বেঁচে নেই, তবে আমি ও বড় ভাই শ্রী সুশান্ত কর্মকার এই পেশা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এখন একটা ঈদের জন্য সারা বছর অপেক্ষা করতে হয়। আগে এমন ছিল না।"
আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন কামাররা
ফিলিপনগর ইউনিয়নের কামার জনি কর্মকার বলেন, "একসময় কামারদের বেশ কদর ছিল। এখন মানুষ মেশিনে তৈরি আধুনিক যন্ত্রপাতির দিকে ঝুঁকছে। আমাদের তৈরি যন্ত্রপাতির প্রতি আগ্রহ কমে গেছে। তবু কোরবানির ঈদের সময় কিছুটা আশার আলো দেখা যায়, কারণ এই সময় রোজগার ভালো হয়।"
কয়লার দাম বেড়ে উৎপাদন খরচ বাড়ছে
একই ইউনিয়নের কামার শিল্পী আব্দুস সালাম জানান, কয়লার দাম দ্বিগুণ হওয়ায় অস্ত্র তৈরির খরচ বেড়েছে। তার ভাষায়, “আগে যে কয়লা ১ টাকায় কিনতাম, এখন তা কিনতে হচ্ছে প্রায় ২ টাকায়। উৎপাদন খরচ বাড়লেও বিক্রিতে আগের মতো লাভ থাকছে না।”
পৈতৃক পেশা টিকিয়ে রাখতে সংগ্রাম
সব সমস্যার পরও কামাররা পৈতৃক এই পেশাকে ভালোবেসে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। কারণ এটি শুধুই জীবিকা নয়, এটি তাদের ঐতিহ্য, আত্মপরিচয়ের অংশ।
কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, দৌলতপুর উপজেলার কামাররা ততই ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। কেউ ক্রেতার অর্ডার সামাল দিতে ব্যস্ত, কেউ আবার রাত-দিন কাজ করে নতুন অস্ত্র তৈরি করছেন। তাদের পরিশ্রমই নিশ্চিত করবে ঈদের দিনে কোরবানির কাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হওয়া।
১৯৬ বার পড়া হয়েছে