চলমান আন্দোলন ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ক্যু’-এর অংশ বলে দাবি এনসিপির

মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০২৫ ৮:২২ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
সচিবালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চলমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনকে প্রশাসনিক ষড়যন্ত্র (‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ক্যু’) হিসেবে দেখছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
দলটি মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করতেই এই আন্দোলন শুরু হয়েছে এবং এর পেছনে বড় রাজনৈতিক দলের ইন্ধন থাকতে পারে বলেও সন্দেহ করছেন এনসিপি নেতারা।
এ বিষয়ে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব সোমবার রাতে বলেন, “সরকারি চাকরিজীবীদের চলমান আন্দোলনে ফ্যাসিবাদের দোসররা থাকতে পারে। আবার যারা সরকারকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তারাও জড়িত থাকতে পারেন।” তবে দলীয়ভাবে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না জানানো হলেও বিষয়টি তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
এদিকে আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ের সংস্কারবিরোধী আমলাদের অপসারণ এবং ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচারের দাবিতে ঢাকায় গণসমাবেশ ডাকেছে ‘জুলাই বিপ্লবী ছাত্র-জনতা’। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সামনে বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে এই কর্মসূচি হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে এনসিপির কয়েকজন নেতা ব্যক্তিগতভাবে সংহতি জানিয়েছেন।
সরকারি চাকরি (সংশোধিত) অধ্যাদেশ–২০২৫ নিয়ে এনসিপির অবস্থান পরিষ্কার। দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “এই আইন বাস্তবায়ন হলে আমলারা জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য হবেন। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করলে চাকরিচ্যুতির মুখোমুখি হবেন। এ কারণেই সরকারি কর্মচারীরা সচিবালয় অচল করে দিয়েছেন।”
তিনি সংশোধনী বিরোধী আমলাদের বরখাস্ত করে নতুন নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এবং এই আন্দোলনের পেছনে কারা মদত দিচ্ছে, তা জনসম্মুখে আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
চট্টগ্রামে এনসিপির পথসভায় দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “৫ আগস্ট–পরবর্তী বাংলাদেশে যদি এই আমলারা সংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, তবে জনগণই তাঁদের বিকল্প খুঁজে নেবে।” তিনি আরও বলেন, “আপনারা যখন শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন করেছিলেন, তখন কোনো প্রতিবাদ করেননি। এখন সংস্কার প্রতিরোধ করছেন—জনগণ তা মেনে নেবে না।”
এনসিপির জ্যেষ্ঠ মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, “যাঁরা সচিবালয়, এনবিআর বা বন্দরে স্ট্রাইক করছেন, তাঁরা দুর্নীতির স্বাধীনতা চাচ্ছেন। কিন্তু চব্বিশ-পরবর্তী বাংলাদেশে তা সম্ভব হবে না।” তিনি এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে সচিবালয়ে টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা। প্রশাসন ক্যাডার বাদে সিভিল সার্ভিসের ২৫টি ক্যাডারের সংগঠন ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ আজ থেকে দুই দিনের কলমবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণে তিন দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও আন্দোলন চলছে। এই সবকিছু মিলিয়ে একযোগে বিভিন্ন স্তরে শুরু হওয়া আন্দোলনকে এনসিপি ‘সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ক্যু’র অংশ হিসেবে দেখছে।
এনসিপি নেতাদের মতে, সংস্কারবিরোধী এই আন্দোলন গণমুখী পরিবর্তনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। দলটি এই আইনের পক্ষে থাকলেও, সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে পরিস্থিতি দৃঢ় হাতে সামাল দিতে।
১২৫ বার পড়া হয়েছে