চানখাঁরপুলে ছাত্র-জনতা হত্যা: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন

রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫ ৭:৩১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
রাজধানীর চানখাঁরপুলে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করা হয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে ‘জুলাই বিপ্লব’-পরবর্তী প্রথম মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হলো।
গত ২০ এপ্রিল তদন্ত সংস্থা ট্রাইব্যুনালে ৯০ পৃষ্ঠার একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে মোট ৭৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি নেয়া হলেও ফরমাল চার্জে চূড়ান্ত করা হয়েছে ৩২ জনকে। তদন্তে আরও যুক্ত ছিল ১৯টি ভিডিও ফুটেজ, ১১টি সংবাদ প্রতিবেদন, ২টি অডিও, ১১টি বই ও রিপোর্ট এবং ৬টি মৃত্যুসনদ।
অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন—ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ আলম ও মো. আখতারুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও নাসিরুল ইসলাম। এদের মধ্যে শেষের চারজন কারাগারে রয়েছেন, বাকিরা পলাতক।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মামলার প্রধান অভিযুক্তদের নির্দেশদাতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে নিরাপত্তা বাহিনী এবং সরকারি দলের নেতাকর্মীরা ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী হামলা চালায়।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, ৫ আগস্ট ভোরে শাহবাগ এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় স্কুলছাত্র শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, রাকিব হাওলাদার, ইসমামুল হক ও মানিক মিয়াকে।
চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম জানান, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়েছে এবং খুব শিগগিরই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পৃথক ফরমাল চার্জও দাখিল করা হবে। তিনি আরও জানান, আশুলিয়ায় ৫ আগস্টের আরেকটি ঘটনায় ছয় আন্দোলনকারীকে হত্যা ও মরদেহ পোড়ানোর অভিযোগে করা মামলার তদন্তও শেষ হয়েছে এবং সেই প্রতিবেদনও প্রসিকিউশনের হাতে যাচ্ছে।
তদন্তে উঠে এসেছে, আন্দোলন দমন এবং নিরীহ জনগণের ওপর হামলা চালাতে ‘সুপিরিয়র কমান্ড’ হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারা ভূমিকা রেখেছেন। তাদের বিরুদ্ধেও পৃথকভাবে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে।
ফরমাল চার্জ গৃহীত হলে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে। গ্রেফতার থাকা আসামিদের আইনজীবীদের প্রস্তুতির জন্য নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে এবং এরপর প্রসিকিউশনের ওপেনিং স্টেটমেন্টের মাধ্যমে বিচারকাজের আনুষ্ঠানিক শুরু হবে।
চলমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৩৩০টি অভিযোগ দাখিল হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টি মামলার তদন্ত চলমান এবং ১৪১ জন অভিযুক্তের মধ্যে গ্রেফতার রয়েছেন ৫৪ জন, আর পলাতক ৮৭ জন।
১১৬ বার পড়া হয়েছে