প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি'র অবস্থান

রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫ ৪:১৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্বাচন ইস্যু ও সাম্প্রতিক বিতর্কের প্রেক্ষাপটে শনিবার (২৪ মে) এক গুরত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তিনটি রাজনৈতিক দল—বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত এসব বৈঠকে সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনকালীন সরকার এবং বিচার ও সংস্কার প্রসঙ্গে আলোচনা হয়।
বিএনপির দাবি: নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন
বৈঠক শেষে বিএনপি প্রতিনিধি দলের প্রধান খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, তারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি লিখিত প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। প্রস্তাবে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ, বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার আহ্বান জানানো হয়।
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা সুনির্দিষ্ট দাবি জানিয়েছি, তবে প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি।”
জামায়াতের জোর: দৃশ্যমান সংস্কার ও সময়োপযোগী বিচার
পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “নির্বাচনের আগে সংস্কার ও বিচারের কিছু প্রক্রিয়া দৃশ্যমান হওয়া দরকার। সংস্কার শেষ না করেই নির্বাচন হলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না।”
জামায়াত ফেব্রুয়ারি অথবা রোজার পর নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা দিলেও, সুনির্দিষ্ট তারিখের দাবি থেকে বিরত ছিল। পদত্যাগ ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, “পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি, তারাই ব্যাখ্যা দেবে। আমরা কারও পদত্যাগ চাইনি।”
এনসিপির উদ্বেগ: গণঅভ্যুত্থানের অঙ্গীকার থেকে সরে যাচ্ছে কিছু পক্ষ
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানান, “জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। ত্রাণ, পুনর্বাসন ও সঞ্চয়পত্র প্রদানের কাজ অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে।”
এনসিপির মতে, প্রধান উপদেষ্টা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি নয়, বরং গণঅভ্যুত্থানকারী ছাত্র ও জনতার প্রতি দায়বদ্ধ। তারা প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের বিরোধিতা করে তাকে দায়িত্বে থাকার আহ্বান জানায়।
প্রধান উপদেষ্টার অবস্থান: নির্বাচন ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, “তিনটি দলই প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে আস্থা রেখেছে এবং তার পদত্যাগ না করার অনুরোধ জানিয়েছে।”
প্রেস সচিব আরও জানান, “প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, নির্বাচন ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে হবে। এটি ‘কাট-অফ টাইম’। এই সময়ের পরে যাবে না।”
তিনটি দলই নির্বাচন কমিশনের সংস্কার ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, “এ মাসেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম শুরু হবে বলেও দলগুলোকে আশ্বস্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।”
সংকট উত্তরণের সম্ভাবনা?
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, “আজকের বৈঠকগুলো অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে। এটা সংকট উত্তরণের দিকে একটি পদক্ষেপ।”
উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জনের মাঝে এই তিন দলের সঙ্গে বৈঠক রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা সৃষ্টি করেছে। বৈঠকের ফলাফল ভবিষ্যতের রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখন সময়ই বলে দেবে।
১০২ বার পড়া হয়েছে