ইতনায় ২৩ মে গণহত্যা দিবস পালিত: শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া

শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫ ৯:৩৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গ্রামে ২৩ মে পালিত হয়েছে গণহত্যা দিবস।
১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ চালায় এই গ্রামে, যাতে প্রাণ হারান অন্তত ৫০ থেকে ৬০ জন নিরীহ গ্রামবাসী।
এর ঠিক একদিন আগে, ২২ মে, মধুমতি নদীর অপর পাড়ে চরভাটপাড়া গ্রামে চালানো হয় আরেকটি বর্বর হামলা। সেখানে পাকিস্তানি সেনারা গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও নারী নির্যাতন চালায়। এই ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন চরভাটপাড়ার কৃষক অনিল কাপালী। নারীদের উপর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি খালি হাতে এক পাক-সেনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে তিনি ওই সেনার রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন এবং সাঁতরে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পার হয়ে আসেন ইতনায়।
এই ঘটনার পরদিন অনিল কাপালীকে খুঁজতে পাকিস্তানি সেনারা ৫টি নৌবহর নিয়ে ঘিরে ফেলে ইতনা গ্রাম। কাক ডাকা ভোরে পাঁচটি দলে ভাগ হয়ে তারা গ্রামে ঢুকে পড়ে। তখন বেশিরভাগ মানুষ ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন, কেউ কেউ ফজরের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
সেনারা প্রথমেই গুলি করে হত্যা করে হিমায়েত মিনাকে, যিনি মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে যান। এরপর একে একে নিহত হন আব্দুর রজ্জাক, যিনি নামাজ শেষে কুরআন তিলাওয়াত করছিলেন, এবং আরও বহু নিরীহ মানুষ। প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ হন বজলার রহমান, আঃ জলিল, হারুন শেখসহ অনেকে।
এ হামলার পর ইতনা গ্রাম রূপ নেয় এক বিভীষিকাময় প্রেতগ্রামে। নিহতদের দাফনের মতো লোকজনও ছিল না। গ্রামবাসীরা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান উপেক্ষা করে কোনো মতে শহীদদের দাফন করে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়।
এই বেদনাদায়ক ঘটনার স্মরণে আজ বিকেলে ইতনায় আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হবে।
১১৫ বার পড়া হয়েছে