বিশ্ববাজারে উত্তেজনায় দাম বেড়েছে তেলের

বুধবার, ২১ মে, ২০২৫ ২:২৮ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
বিশ্ববাজারে নতুন করে উত্তেজনার সঞ্চার হয়েছে ইসরাইল-ইরান উত্তেজনা ঘিরে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে সিএনএনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
খবরটি প্রকাশের পরপরই অপরিশোধিত তেলের দাম দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী হয়, যা বিশ্বজুড়ে বাজারে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
বুধবার ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) তেলের দাম ১.২ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৬৩.৭৬ ডলারে পৌঁছায়, আর ব্রেন্ট ক্রুড তেল ১.১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ব্যারেলপ্রতি ৬৬.১০ ডলারে। পাশাপাশি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত স্বর্ণের দামও প্রায় ২ শতাংশ বেড়ে গেছে।
হংকংভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এএফপি জানায়, এই পরিস্থিতিতে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের সংঘাতের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
তবে আশ্চর্যজনকভাবে, এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির পরও এশিয়ার অধিকাংশ শেয়ারবাজার ইতিবাচক প্রবণতা ধরে রেখেছে। হংকং, সাংহাই, সিডনি, সিউল, ওয়েলিংটন, তাইপে, ম্যানিলা এবং মুম্বাইয়ের বাজারগুলোতে সূচক উর্ধ্বমুখী ছিল। তবে টোকিও, সিঙ্গাপুর ও ব্যাংককের সূচকে কিছুটা পতন লক্ষ্য করা গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক আলোচনার অনিশ্চয়তা এবং ইসরাইলের কড়া অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যকে সরাসরি সংঘাতের পথে ঠেলে দিতে পারে। ওয়েস্টপ্যাক ব্যাংকের বিশ্লেষক রবার্ট রেনি বলেন, "আলোচনা ভেস্তে গেলে ইসরাইল কতটা এগোতে পারে, তার একটি শক্ত বার্তা এখনই স্পষ্ট। এর ফলে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের ঝুঁকি প্রিমিয়াম দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।"
চলতি মাসের শুরু থেকে তেলের দাম প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হওয়া ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির উন্নতিই এই ঊর্ধ্বগতির পেছনে বড় কারণ।
এদিকে, চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বেইজিং অভিযোগ করেছে, ওয়াশিংটনের প্রযুক্তি রপ্তানিতে নতুন বিধিনিষেধ নিপীড়নমূলক। মার্কিন কর্তৃপক্ষ চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের উন্নত এআই চিপ ‘অ্যাসেন্ড’ ব্যবহারের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছে, যা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক নীতিও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উচ্চ শুল্কনীতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা থাকায় সুদের হার এখনই কমানোর বিষয়ে তারা সতর্ক।
সেন্ট লুইস ফেড প্রেসিডেন্ট আলবার্তো মুসালেম বলেন, "শুল্ক কমানোর কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এর প্রভাব এখনো প্রবল। এখনই সুদের হার কমালে ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতিকে ভুলভাবে মূল্যায়ন করা হতে পারে।" আটলান্টা ফেডের প্রধান রাফায়েল বোস্টিকও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা নিয়ে একই রকম সতর্কতা প্রকাশ করেছেন।
বাজারের সাম্প্রতিক চিত্র (০২:৩০ জিএমটিএ অনুযায়ী):
ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI): +১.২% → $৬৩.৭৬
ব্রেন্ট ক্রুড: +১.১% → $৬৬.১০
নিক্কেই ২২৫ (টোকিও): −০.৬% → ৩৭,২৯৮.৯৮
হ্যাং সেং (হংকং): +০.৬% → ২৩,৮২৭.৭৮
সাংহাই কম্পোজিট: +০.২% → ৩,৩৮৭.৫৭
FTSE 100 (লন্ডন): −০.২% → ৮,৭৬৭.৫৯
ইউরো/ডলার: ↑ $১.১৩২২
পাউন্ড/ডলার: ↓ $১.৩৩৯১
ডলার/ইয়েন: ↓ ¥১৪৩.৯০
ডাউ জোন্স (নিউ ইয়র্ক): −০.৩% → ৪২,৬৭৭.২৪।
১৩২ বার পড়া হয়েছে