রোহিঙ্গাদের সাগরে ফেলায় ভারতের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু জাতিসংঘের

বুধবার, ২১ মে, ২০২৫ ৩:২০ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ভারতের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে—কমপক্ষে ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সমুদ্রে ফেলে মিয়ানমারে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগে দেশটির বিরুদ্ধে জাতিসংঘ তদন্ত শুরু করেছে।
এ ঘটনাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতির লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং এপি-র মতো প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
‘সাগরে ফেলেই ফিরে যেতে বলা হয়’
৮ মে সন্ধ্যায় দিল্লিতে বসবাসরত এক তরুণ রোহিঙ্গা শরণার্থী তার মিয়ানমারে অবস্থানরত বাবা-মায়ের কাছ থেকে একটি কল পান। তারা জানান, ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের আন্দামান সাগরে একটি জাহাজ থেকে নামিয়ে দিয়ে শুধু লাইফ জ্যাকেট দিয়ে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়। কোনো সহায়তা ছাড়াই তারা সাঁতরে মিয়ানমারের উপকূলে পৌঁছাতে বাধ্য হন।
এর আগে, ৬ মে দিল্লি থেকে রোহিঙ্গা পরিবারের সদস্যদের আটক করে নিয়ে যায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। ১৫ জন খ্রিস্টানসহ মোট ৪১ জনকে একটি বিমানে করে নিয়ে যাওয়ার পর, তাদেরকে সাগরে নামিয়ে দেওয়া হয় বলে জানায় পরিবারের সদস্যরা।
‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে অভিযুক্ত
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর ১৫ মে এক বিবৃতিতে জানায়, আটককৃতদের মধ্যে শিশু, নারী এবং বৃদ্ধও ছিলেন। সংস্থাটি এই ঘটনাকে “অবিবেচনাপ্রসূত ও অমানবিক” বলে আখ্যা দিয়েছে এবং একজন বিশেষজ্ঞকে দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রিউজ বলেন, “এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সুরক্ষা চাওয়া ব্যক্তিদের প্রতি অবজ্ঞার উদাহরণ। এটি একটি ভয়াবহ ঘটনা এবং ‘নন-রিফাউলমেন্ট’ নীতির লঙ্ঘন।”
ভারতের নীরবতা এবং আইনি বিতর্ক
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নৌবাহিনী এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। অন্যদিকে, রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়া আইনজীবী দিলাওয়ার হুসেইন জানান, তারা সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন করেছেন যাতে শরণার্থীদের ফেরত এনে দিল্লিতে পুনর্বাসন করা হয়।
তবে, ভারতের সর্বোচ্চ আদালত এ বিষয়ে শুনানি করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মন্তব্য করেছে, “এটি একটি চমৎকারভাবে রচিত গল্প মাত্র।”
এই অবস্থানে হতাশা প্রকাশ করে বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, “ভারতের সংবিধান ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিক ও অনাগরিক—উভয়ের জন্য জীবন ও স্বাধীনতার অধিকার নিশ্চিত করেছে। অথচ এখন বলা হচ্ছে, শরণার্থীদের সাগরে ফেলে দেওয়াও ন্যায্য।”
ভারতের শরণার্থী নীতির ঘাটতি
উল্লেখযোগ্য যে, ভারত ১৯৫১ সালের জাতিসংঘ শরণার্থী কনভেনশন এবং ১৯৬৭ সালের সংশ্লিষ্ট প্রটোকলের সদস্য নয়। দেশটির কোনো জাতীয় শরণার্থী আইনও নেই। তবুও, বিগত বছরগুলোতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা কয়েক হাজার রোহিঙ্গা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।
তবে সাম্প্রতিক ঘটনায় ভারত সরকারের ‘অমানবিক আচরণ’ বিশ্বজনীন নিন্দার মুখে পড়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতিমালা অনুসরণ করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা হয়।
১১৮ বার পড়া হয়েছে