বাংলাদেশ সীমান্তে পুশ-ইনের ঘটনা বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে, উদ্বেগে স্থানীয়রা

রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫ ৩:৪৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তজেলাগুলো দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশ-ইনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
চলতি মে মাসেই অন্তত ৩৭০ জনকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ), যাদের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক ছাড়াও রয়েছেন রোহিঙ্গা ও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) কার্ডধারী রিফিউজি।
সীমান্ত রক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানায়, পুশ-ইন হওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই অচেনা, নিজেদের পরিচয় জানাতে পারছেন না। এর ফলে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা ও মানবিক সংকট উভয়ই বাড়ছে। সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রাম, ঝিনাইদহ, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও খাগড়াছড়িতে এসব ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে।
কুড়িগ্রামে আতঙ্ক বাড়ছে
বিশেষ করে কুড়িগ্রামের সীমান্ত এলাকাগুলোতে পুশ-ইনের পাশাপাশি মাদক ও চোরাচালান বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জেলার ৭টি উপজেলার ভারত সীমান্তে প্রায় ৫০-৬০ কিলোমিটার এলাকায় এখনো কাঁটাতার না থাকায় সহজেই লোকজন সীমান্ত অতিক্রম করতে পারছে।
সাম্প্রতিক একটি ঘটনায়, মিয়ানমারে সহিংসতায় ঘরছাড়া হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা দম্পতি মামুদ উল্লাহ ও রোমানা বেগমের পরিবারকে বিএসএফ ৭ মে রাতে কুড়িগ্রামের ভাওয়ালকুড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশ-ইন করে। তাদের দাবি, চোখ বেঁধে গাড়িতে করে এনে দীর্ঘপথ হাঁটিয়ে সীমান্ত পের করানো হয়।
বিজিবি’র কুড়িগ্রাম-২২ ব্যাটালিয়নের সোনাহাট কোম্পানি ক্যাম্পের কমান্ডার সুবেদার আইয়ুব হোসেন বলেন, “পরিবারটি রাতভর হেঁটে একটি অচেনা জায়গায় এসে পৌঁছায়। পরে তাদের আটক করা হয়।”
সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী জানিয়েছেন, সীমান্ত এলাকা বড় হওয়ায় প্রতিটি পয়েন্টে পর্যাপ্ত নজরদারি কঠিন। এজন্য আনসার বাহিনীর সহায়তা এবং স্থানীয়দের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
সরকার বলছে, ভারতকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে—যদি কেউ প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিক হন, তাহলে তাকে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। অন্যদিকে, রোহিঙ্গা বা ভারতের নাগরিকদের ক্ষেত্রে সরকারি কূটনৈতিক চ্যানেলে আনুষ্ঠানিক ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
চলতি মে মাসে যেসব সীমান্ত দিয়ে পুশ-ইনের ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে খাগড়াছড়িতে ৭৩ জন, কুড়িগ্রামে ৪৪ জন, সিলেটে ২৩ জন, ঝিনাইদহে ২২ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৭ জন, মৌলভীবাজারে ১৫ জন, পঞ্চগড়ে ১১ জন ও চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ১০ জনকে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়েছে।
বিএসএফের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চললেও এখনও কার্যকর কোনও সমাধান আসেনি। সীমান্তে নিরাপত্তা, মানবপাচার ও অভিবাসন সমস্যা একত্রে মিলে নতুন সংকট তৈরি করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
১২০ বার পড়া হয়েছে