আটঘরিয়ায় বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ; মোটরসাইকেল ও অফিস ভাঙচুর, আহত ৫

শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫ ৫:২৪ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর ডিগ্রি অনার্স কলেজের অভিভাবক সদস্য পদে মনোনয়নপত্র তোলা কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে পাঁচজন গুরুতর আহত হয়েছেন এবং অন্তত ২৩টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার দেবোত্তর বাজার এলাকায় দফায় দফায় এ সংঘর্ষ চলে। ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াতের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কলেজের অভিভাবক সদস্য নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়নপত্র উত্তোলনের শেষ দিন। এদিন দুপুরে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আছিম উদ্দিনসহ তিনজন বিএনপি-সমর্থিত অভিভাবক সদস্য পদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। কিছুক্ষণ পর জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমির নকিবুল্লাহ, সাবেক আমির নাসির ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ওয়ালিউল্লাহর নেতৃত্বে জামায়াতের কয়েকজন নেতাকর্মী এসে নিজেদের প্রার্থীর মনোনয়নপত্র তুলতে গেলে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন।
এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে জামায়াতের এক নেতাকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বিভিন্ন স্থান থেকে জামায়াত ও তাদের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং বিএনপির উপজেলা কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।
এক পর্যায়ে জামায়াত নেতাকর্মীরা যোহরের নামাজ পড়তে মসজিদে গেলে বিএনপি নেতাকর্মীরাও পাল্টা বিক্ষোভে নামে এবং জামায়াতের কার্যালয়ে হামলা চালায়। সন্ধ্যার দিকে আবারও লাঠিসোঁটা ও লোহার রডসহ মিছিল বের করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে এবং বাজারের অন্তত ২৩টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।
আহতদের মধ্যে বিএনপির মামুন (৪২), কামরুল ইসলাম (৩৮), আছিম উদ্দিন (৫৫), রতন মোল্লা (৩৮) এবং জামায়াতের সাইদুল ইসলাম (৪২) এর নাম জানা গেছে। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ বিষয়ে আটঘরিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনোয়ার হোসেন আলম অভিযোগ করে বলেন, "জামায়াত নেতাকর্মীরা আমাদের অফিসে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। কলেজে তাদের মনোনয়ন তুলতে বাধা দেওয়া হয়নি, তারা নিজেরা মিথ্যা প্রচার করছে।"
অন্যদিকে উপজেলা জামায়াতের আমির মো. নকিবুল্লাহ দাবি করেন, "বিএনপি নেতাকর্মীরা আমাদের মনোনয়নপত্র তুলতে বাধা দিয়েছে এবং আমাদের নেতাকে মারধর করেছে। পরে নামাজের সময় মসজিদের বাইরে গুলি-বোমা ফাটিয়ে আমাদের উসকে দেয়। আমরা আত্মরক্ষায় প্রতিহত করেছি।"
আটঘরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুজ্জামান জানান, উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে এবং একে অপরের কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ লিখিত অভিযোগ দেয়নি, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দেবোত্তর ডিগ্রি অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, “নির্বাচনের মনোনয়ন তোলার শেষ দিনে বিএনপির পক্ষ থেকে তিনজন ফরম নিয়েছেন। জামায়াতের প্রতিনিধিরা এলে তাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। তবে ক্যাম্পাসের বাইরে যা হয়েছে, তা আমাদের জানার বাইরে।”
১২১ বার পড়া হয়েছে