সর্বশেষ

সারাদেশ

সাতক্ষীরার বাজারে আমের ছড়াছড়ি, দাম পড়ে যাওয়ায় হতাশ চাষিরা

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা
স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা

বৃহস্পতিবার , ১৫ মে, ২০২৫ ২:৪৯ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
সাতক্ষীরার বাজারজুড়ে এখন গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ ও গোলাপখাস আমে ভরপুর। তবে আমের সরবরাহ বেশি হওয়ায় বাজারে দাম কমে গেছে, যার প্রভাব পড়েছে আম চাষিদের ওপর।

হিমাগারের অভাব, আগাম টাকা (দাদন) নিয়ে গাছ পরিচর্যার বাধ্যবাধকতা এবং বাজারে কম সময় থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা।

দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় সাতক্ষীরায় আম পাকে আগেভাগে। বিশেষ করে মাটি ও আবহাওয়ার কারণে এখানকার গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই, হিমসাগর, ন্যাংড়া ও আম্রপালি জাতের আম দেশ ও বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে। বিষমুক্ত ও সুস্বাদু হওয়ায় সাতক্ষীরার আমের চাহিদাও বেশি।

সরকারিভাবে ৫ মে থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, গোলাপখাসসহ স্থানীয় জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে। চলতি বছর তাপমাত্রা বেড়ে ৩৭–৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছানোর ফলে হিমসাগর আমও আগেভাগে পেকে গেছে।

তবে জেলার সুলতানপুর বড়বাজার, তালা, কলারোয়া, আশাশুনি, কালিগঞ্জ ও দেবহাটার বাজারগুলোতে আমের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় বেশি হওয়ায় দাম পড়ে গেছে। চাষিরা বলছেন, হিমাগার না থাকায় ও সরকারের সহায়তা না পাওয়ায় তারা আড়ৎদারদের দাদনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। এতে করে বাজারদরের চেয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা কম দামে আম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

সদর উপজেলার ফিংড়ি গ্রামের চাষি কমলেশ সরদার বলেন, “আমের ফলন ভালো হলেও তিন থেকে চার মাসের জন্য স্বল্পসুদে ঋণ না পেয়ে দাদন নিতে হয়েছে। এতে লোকসানে পড়ছি।”

একই গ্রামের চাষি গোবিন্দ ঘোষ জানান, তাদের ৩০ বিঘা জমিতে নানা জাতের আম রয়েছে। তবে বাজারে যেই দামে আম বিক্রি করছেন, মধ্যস্বত্বভোগীরা সেই আম অনেক বেশি দামে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে।

বড়বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম বলেন, “গত বছর গোবিন্দভোগ আমের মণ ২,৮০০ টাকা ছিল, এবার তা ১,৮০০–২,০০০ টাকায় নেমে এসেছে।” তিনি সাতক্ষীরায় হিমাগার স্থাপনের দাবি জানান।

কয়েকজন আম চাষি জানান, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় আমের সাইজ কিছুটা ছোট হয়েছে, তবে ফলন ভালো। ঝড় না হলে এবং বাজারে দাম ঠিক থাকলে লাভবান হবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।

বাজারে প্রতিদিন প্রচুর আম উঠলেও ক্রেতার সংখ্যা কম — এমনটাই জানিয়েছেন সুলতানপুর বড়বাজার কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রওশান আলী। তিনি বলেন, “গোপালভোগ ও গোবিন্দভোগ পাড়ার সময় এক সপ্তাহ এগিয়ে আনলে চাষিরা আরও উপকৃত হতেন।”

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে জেলার প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার আম বিক্রি সম্ভব হবে এবং বিদেশে রপ্তানিও করা হবে। গরমের কারণে হিমসাগর আম পাড়ার সময় ২০ মে থেকে এগিয়ে এনে ১৫ মে নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলায় ৪,১৩৫ হেক্টর জমিতে ৫,২৯৯টি আম বাগান রয়েছে, যাতে ১৩,১০০ জন চাষি যুক্ত রয়েছেন। চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬২,৮০০ মেট্রিক টন। এর এক-চতুর্থাংশ জমিতে হিমসাগর আম উৎপাদিত হয়েছে, যার ৭০ মেট্রিক টন বিদেশে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, চলতি বছর তাপমাত্রা বেশি থাকায় হিমসাগর আম আগে থেকেই পাকতে শুরু করেছে এবং ৫ মে থেকে অন্যান্য দেশি জাতের আম পাড়া শুরু হয়েছে।

সরকারিভাবে যদি পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদান করা হয়, তাহলে আম চাষিরা আরও লাভবান হবেন এবং এ খাতে নতুন উদ্যোক্তারাও আগ্রহী হবেন, এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

১৪৬ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
এলাকার খবর

বিজ্ঞাপন

৩০০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ সব খবর
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন