সর্বশেষ

বিনোদন

রাজনীতিতে জড়িয়ে হারিয়ে যাচ্ছেন শিল্পীরা, প্রতিকার নিয়ে যা বলছেন সংশ্লিষ্টজনরা

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫ ১২:২৪ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক নতুন সংকটের জন্ম দিচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ক্ষমতার পালাবদল।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে বদলে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে, বিশেষ করে বিনোদন জগৎেও।

অভিনেতা, গায়ক, শিল্পীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের মধ্যে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক পরিচয় ও আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে সৃষ্টি হয়েছে গভীর সংকট। যারা আগে শেখ হাসিনার গণহত্যা সমর্থন, ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন, তারাই এখন বিপদে পড়েছেন। কিছু শিল্পী ভোল পালটে বর্তমান সরকারের সঙ্গে মিশে গেছেন, তবে বেশিরভাগ আড়ালে রয়েছেন। আন্দোলনের সময় প্রকাশ্য সমর্থন ও রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার জন্য অনেকের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার ও সামাজিক বয়কটের মতো ঘটনা ঘটছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের রাজনীতি মূলত ক্ষমতার জন্য লড়াই, যেখানে জনকল্যাণের দিকটি খুব কমই দেখা যায়। এর ফলে, ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা শিল্পীরা পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। চলতি বছরই বেশ কয়েক ডজন শিল্পীর নামে মামলা হয়েছে, অনেকে গ্রেফতারও হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে অনেক শিল্পীই এখন কাজ হারিয়ে, মিডিয়ায় অপ্রকাশ্য জীবন নিয়ে সংকটে পড়েছেন। সামাজিক মাধ্যমেও তাদের উপস্থিতি কমে গেছে, কেউ কেউ হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, দেশের বিশিষ্টজনরা বলছেন, ‘শিল্পীদের ওপর হামলার ঘটনা যেন রাজনৈতিক দ্বন্দ্বেরই অংশ। যারা হামলার শিকার, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় বা দলের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। এভাবে শিল্পীদের বিভাজন ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।’

অন্যদিকে, সমাজের আয়না হিসেবে পরিচিত শিল্পীরা যখন রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় হয়ে ওঠেন, তখন তাদের ক্যারিয়ার ও মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক নামকরা শিল্পী রাজনৈতিক মামলায় জড়িয়ে পড়েছেন, কেউ সরকারের বিরোধী মন্তব্যের কারণে বিপদে পড়েছেন, আবার কেউ দলীয় কোন্দলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর প্রভাব পড়ছে তাদের কর্মক্ষমতা ও মানসিক স্বাস্থ্যে।

নেটিজেনরাও বলছেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শিল্পীদের নিরপেক্ষ থাকা কঠিন। কেউ কেউ মনে করেন, নির্দিষ্ট দলের সঙ্গে যুক্ত থাকাই শিল্পীদের জন্য বাধ্যতামূলক। তবে, অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম বলেন, ‘সক্রিয় রাজনীতি শিল্পীদের জন্য উচিত নয়। শিল্পী হবেন সার্বজনীন। তবে রাষ্ট্রের সঙ্গে থাকাকালীন নিরপেক্ষ থাকা সম্ভব নয়। মানুষ যখন কোনো রাষ্ট্রে বসবাস করে, তার পক্ষপাতিত্ব স্বাভাবিক। তবে সেটা যেন অন্ধের মতো না হয়।’

এদিকে, রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি ব্যক্তিগত ইস্যু ও সামাজিক হয়রানির কারণে অনেক শিল্পী কাজ হারাচ্ছেন। তাদের আড়াল হতে হচ্ছে, মিডিয়া থেকে দূরে সরছেন। এই পরিস্থিতিতে নাটক, সিনেমা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে শিল্পীর সংখ্যা কমে আসছে, যা দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন টিকে থাকলে শিল্পীদের শিল্পকর্মের ওপর মনোযোগ দেওয়া জরুরি, যাতে এই সংকট থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যায়।

সংক্ষেপে, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য এই রাজনৈতিক অস্থিরতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। শিল্পীদের দায়িত্ব হলো তাদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে সমাজের সত্যতা তুলে ধরা, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপের মধ্যে তাদের পক্ষে কাজ চালিয়ে যাওয়া অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

১৮৪ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
বিনোদন নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন