দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে শৈবাল বিস্তারে প্রাণহানি: দুই শতাধিক সামুদ্রিক প্রজাতি বিপন্ন

মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫ ২:১৩ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার উপকূলজুড়ে একটি বিষাক্ত শৈবালের ব্যাপক বিস্তারে দুই শতাধিক সামুদ্রিক প্রজাতির প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই শৈবাল বিস্তার ইতোমধ্যে প্রায় ৪,৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে—যা প্রায় ক্যাঙ্গারু দ্বীপের সমান।
সংরক্ষণবিদরা ঘটনাটিকে 'মাছের জন্য ভয়াবহ এক সিনেমা'র সঙ্গে তুলনা করছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাঠানো ছবি ও তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে, রক্তাক্ত অবস্থায় বড় সংখ্যক হাঙর, রে ফিশ এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী সৈকতে ভেসে উঠছে। মৃত অবস্থায় পাওয়া প্রাণীর তালিকায় একটি তিন মিটার দীর্ঘ গ্রেট হোয়াইট হাঙরও রয়েছে।
বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. ভেনেসা পিরোত্তা জানান, এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। “শৈবাল বিস্তার সাধারণত মৌসুমি হলেও এবার যে মাত্রায় ও গতি নিয়ে তা ছড়াচ্ছে, তা অভূতপূর্ব,” বলেন তিনি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই শৈবাল থেকে নির্গত এক ধরনের বিষ মাছ, হাঙর, রে ফিশসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা সৃষ্টি করছে, যার ফলে তারা মারা যাচ্ছে। শৈবালের ঘনত্ব পানির অক্সিজেন কমিয়ে দিচ্ছে, ফলে প্রাণীরা দমবন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করছে। অজফিশ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ব্র্যাড মার্টিন জানান, শৈবালের বিষ গিল ও টিস্যু নষ্ট করে এবং রক্তে প্রভাব ফেলে।
বিশেষভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে রিফ অঞ্চলের কম সচল প্রাণীগুলি—যেমন পাফার ফিশ ও কাঁকড়া—যারা বিষাক্ত অঞ্চল থেকে সরতে পারে না।
মানুষের জন্য এই শৈবাল সরাসরি প্রাণঘাতী না হলেও, বেশি সময় সংস্পর্শে থাকলে ত্বকে জ্বালাপোড়া এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া সরকার সৈকতে বিবর্ণ পানি বা ফেনা দেখা গেলে সাঁতার না কাটার পরামর্শ দিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চলা সমুদ্রের উষ্ণতাবৃদ্ধি এ বিপর্যয়ের একটি বড় কারণ। সেপ্টেম্বর থেকে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার উপকূলবর্তী পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। সেই সঙ্গে মার্চ থেকে চলা অস্বাভাবিক উষ্ণ আবহাওয়া শৈবালের বিস্তার ও স্থায়িত্ব বাড়িয়ে তুলেছে।
২০১৪ সালের পর এই প্রথম দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় এত বড় পরিসরে বিষাক্ত শৈবাল বিস্তার দেখা গেল। ইতোমধ্যে বাণিজ্যিক মৎস্যশিকার বন্ধসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পর্যটন খাতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, কারণ সৈকতে ভেসে আসা মৃত প্রাণীর কারণে পর্যটকদের সংখ্যা কমে গেছে।
বর্তমানে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার সরকার ও গবেষকরা শৈবালের পশ্চিমমুখী বিস্তার পর্যবেক্ষণে রেখেছেন এবং সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
১০৫ বার পড়া হয়েছে