সর্বশেষ

মতামত

৫০ বছর পার করলো ফারাক্কা

গঙ্গা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষা আর কত?

মনজুর এহসান চৌধুরী
মনজুর এহসান চৌধুরী

রবিবার, ১১ মে, ২০২৫ ১১:০৪ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
ফারাক্কা বাঁধের অর্ধশতাব্দী পূর্তিতে বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থা ক্রমাগত সংকটের মুখে। ১৯৯৬ সালের চুক্তি সত্ত্বেও পানির ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত আজও হয়নি এবং হবে বলেও অনুমান করা যায় না।

১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল চালু হয় বাংলাদেশের জন্য মরণফাঁদ এই ফারাক্কা বাঁধ। মূলত কলকাতা বন্দরের নাব্যতা রক্ষায় গঙ্গার পানি ভাগিরথী-হুগলী নদীতে প্রবাহিত করা উল্লেখ করে এই বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু বাঁধ চালু হবার পর থেকে নিয়মিত পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশকে এক ব্যাপক ক্ষতির মুখে ফেলে দেয় ভারত। আজকের বিষয় তাই ফারাক্কা বাঁধ।

ফারাক্কার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
১৯৫০-৬০ এর দশকে কলকাতা বন্দরের নাব্যতা কমে যাওয়া এবং হুগলী নদীতে পলি জমার সমস্যা প্রকট হলে ভারত সরকার ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ১৯৫৬ সালে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। ১৯৬১ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়। বাঁধটি ২,২৪০ মিটার (৭,৩৫০ ফুট) লম্বা এবং এতে ১০৯টি গেট রয়েছে। নির্মাণে খরচ হয়েছিল প্রায় এক বিলিয়ন ডলার, এবং এটি নির্মাণে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন সহায়তা করেছিল। ১৯৫১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার প্রথম আনুষ্ঠানিক উদ্বেগ প্রকাশ করলে ভারত এটিকে “অনুমাননির্ভর” বলে প্রত্যাখ্যান করে। নির্মাণের সময়কালজুড়ে বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ও ভারতের মধ্যে গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা ও বিরোধ চলে। ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণে বেশ কিছু প্রযুক্তিগত অসুবিধা ও চ্যালেঞ্জ ছিল, যেগুলো নির্মাণকালীন এবং পরবর্তী সময়ে প্রকল্পটির টেকসইতা ও কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করেছে। ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে, কিন্তু তাতে কোনো ফলাফল হয় না; ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল ভারত একতরফাভাবে বাঁধ চালু করে।

ফারাক্কার প্রভাবে বাংলাদেশের নদী:
ফারাক্কা বাঁধের ৫০ বছরের ইতিহাস এবং বাংলাদেশের নদী অববাহিকায় এর প্রভাব একটি জটিল ও বহুমাত্রিক ইস্যু। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে গঙ্গা নদীতে নির্মিত এই বাঁধটি বাংলাদেশের পরিবেশ, অর্থনীতি ও নদী ব্যবস্থায় গভীর প্রভাব ফেলেছে।
এর ফলে পদ্মা নদীর প্রবাহ ৬০% কমে গেছে এবং এই অববাহিকার ২৩০টির মধ্যে ৮০টি নদী প্রায় শুকিয়ে গেছে।
পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার ফলে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে (খুলনায় ৫০০ থেকে ২৯,৫০০ মাইক্রোমোস), পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। ফলে সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান হুমকির মুখে পড়েছে।
এর প্রভাবে প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে থাকে।
নদীর পলি ভরাট ও নাব্যতা হ্রাসের কারণে নৌপরিবহন খাত ৭৫% সংকুচিত হয়ে গেছে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রত্যাশিত ক্ষতি হয়েছে।
এমতাবস্থায়, এই পরিবেশগত পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট, বর্ষায় আকস্মিক বন্যা, নদীভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি অব্যাহত রয়েছে।

ভারত-বাংলাদেশ পানি চুক্তি:
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন (JRC) গঠন করা হয়। সেই সময় শীর্ষ বৈঠকে ফারাক্কা সংক্রান্ত চুক্তির মূল বিষয় ছিল—ফারাক্কা বাঁধ চালু করার আগে গঙ্গার শুষ্ক মৌসুমের পানিবণ্টন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য চুক্তি হবে। এই বৈঠকে ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথ ঘোষণায় উল্লেখ করেন, গঙ্গার ন্যূনতম প্রবাহের সময় উভয় দেশের চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট পানি নাও থাকতে পারে, তাই শুষ্ক মৌসুমে পানির পরিমাণ বাড়ানোর (অগমেন্টেশন) দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজে বের করার জন্য যৌথ নদী কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

চুক্তিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়, ফারাক্কা প্রকল্প চালুর আগে পানিবণ্টন নিয়ে সমঝোতা হবে।
কিন্তু ফারাক্কা চালুর আগে কোনো স্থায়ী চুক্তি হয়নি; বরং ১৯৭৪ সালের যৌথ ঘোষণা ও ১৯৭৫ সালের স্বল্পমেয়াদি পরীক্ষামূলক ব্যবস্থার ভিত্তিতে ভারত বাঁধ চালু করে। যদিও ভারত বলেছিল, পানি বণ্টনের বিষয়ে চূড়ান্ত সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত ফারাক্কা প্রকল্প পুরোপুরি চালু হবে না। তবে ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ ভারতকে ফারাক্কার ফিডার ক্যানাল পরিদর্শনের অনুমতি দেয় এবং পরীক্ষামূলকভাবে ১০ দিন (২১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে) ৩১০-৪৫০ কিউসেক পানি সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেয়। এই অস্থায়ী ব্যবস্থার পর ভারত একতরফাভাবে বাঁধ চালু করে এবং শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার পানি প্রত্যাহার অব্যাহত রাখে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

ফারাক্কার পানি বণ্টন নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রধানত দুটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে—১৯৭৭ সালের পাঁচ বছরের চুক্তি ও ১৯৯৬ সালের ৩০ বছরের চুক্তি।

প্রথম চুক্তিটি হয় ১৯৭৭ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মধ্যে। এই চুক্তির মেয়াদ ছিল ৫ বছর (১৯৭৭-১৯৮২)। এর মধ্যে ছিল, জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার পানির বণ্টন, পানির প্রবাহের ভিত্তিতে ১০ দিন অন্তর ভাগাভাগির সূচি নির্ধারণ। পানির প্রবাহ অত্যন্ত কমে গেলে (নিম্ন প্রবাহ) বাংলাদেশের জন্য সর্বনিম্ন ৮০% ভাগ নিশ্চিত করার গ্যারান্টি ক্লজ। যৌথ পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন ও তথ্য আদান-প্রদানের ব্যবস্থা। তবে এই চুক্তি আংশিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছিল, কিন্তু বাংলাদেশের প্রত্যাশিত ন্যায্য হিস্যা পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি।

চুক্তির মূল শর্ত ছিল—শুকনা মৌসুমে (২১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত) প্রতি ১০ দিন অন্তর বাংলাদেশ ৩৪,৫০০ কিউসেক এবং ভারত ২০,৫০০ কিউসেক পানি পাবে; এবং বাংলাদেশের প্রাপ্য হিস্যার ৮০% এর নিচে নামবে না—এমন গ্যারান্টি ক্লজ সংযুক্ত ছিল।
বাস্তবতা হলো, ভারত বেশ কয়েকবার চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত পানি সরবরাহ করেনি। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ভারত পুনরায় নবায়নে গড়িমসি করে এবং পরবর্তী স্বল্পমেয়াদি চুক্তিগুলোতে বাংলাদেশের জন্য থাকা গ্যারান্টি ক্লজও বাদ পড়ে। এমনকি চুক্তি চলাকালীন সময়েও, বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে, বাংলাদেশের অনেক নদীতে পানির প্রবাহ চুক্তি অনুযায়ী পাওয়া যায়নি—কিছু ক্ষেত্রে মাত্র ৬,৪৫৭ কিউসেক পর্যন্ত নেমে এসেছে, যেখানে চুক্তি অনুযায়ী ৩৪,৫০০ কিউসেক পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ভারত তা দেয়নি।

শেষ চুক্তিটি হয় ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী এইচ. ডি. দেবগৌড়া ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মধ‍্যে। এই চুক্তি ৩০ বছর মেয়াদে তবে নবায়নযোগ্য।

চুক্তিতে বলা হয়েছে—৭০ হাজার কিউসেকের কম পানির ক্ষেত্রে অর্ধেক ভাগ পাবে বাংলাদেশ। ৭০-৭৫ হাজার কিউসেক পানির মধ্যে বাংলাদেশ পাবে ৩৫ হাজার কিউসেক। আর ৭৫ হাজারের বেশি হলে ভারত ৪০ হাজার কিউসেক রাখবে এবং বাকিটা বাংলাদেশ পাবে। মার্চ ১১ থেকে মে ১০ পর্যন্ত, তিনটি ১০ দিন করে উভয় দেশ ৩৫,০০০ কিউসেক করে পানি পাবে (বিকল্পভাবে)।

১৯৭৭ সালের মতো সরাসরি গ্যারান্টি ক্লজ নেই, তবে কোনো ১০ দিনের সময়ে প্রবাহ ৫০,০০০ কিউসেকের নিচে নেমে গেলে দুই দেশ তাৎক্ষণিক আলোচনা করে সমাধান করবে। এবং কোনো সমঝোতা না হলে, বাংলাদেশ তার নির্ধারিত অংশের অন্তত ৯০% পাবে। পানির প্রবাহ, তথ্য সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণের জন্য যৌথ কমিটি গঠন করা হয়।

এই চুক্তি ৩০ বছর পর পারস্পরিক সম্মতিতে নবায়নযোগ্য। ১৯৯৬ সালের চুক্তি অনুযায়ী ভারত বেশ কয়েক বছর বাংলাদেশকে নির্ধারিত পানি দিয়েছে, তবে বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে ও পানির স্বল্পতার সময় বাংলাদেশ প্রায়ই ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। চুক্তির বাস্তবায়নে সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিতর্ক রয়ে গেছে, এবং এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা ও সমঝোতা অব্যাহত রয়েছে।

গঙ্গা বাঁধ প্রকল্প:
১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার মসলেমপুর গ্রামে, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ সংলগ্ন পদ্মা নদীর তীরে গঙ্গা বাঁধ (ব্যারেজ) প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। সরকারের বিদ্যুৎ, পানি সম্পদ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী কাজী আনোয়ারুল হক।

এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল—দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের ১০টি জেলার ৬০ লাখ ৪০ হাজার একর কৃষি জমিতে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, মৎস্য ও কৃষি উন্নয়ন, বনায়ন, লবণাক্ততা রোধ, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং পরিবেশের টেকসই উন্নয়ন। এটি ছিল বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প—গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্পের সম্প্রসারিত রূপ।

গঙ্গা বাঁধ প্রকল্পের কারিগরি ও আর্থিক পরিকল্পনা:
গঙ্গা বাঁধের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬,৯৯০ ফুট, গেটের সংখ্যা ১০০টি এবং পানির নির্গমন ক্ষমতা ২৫ লাখ কিউসেক। ১৯৮৪ সালের সংশোধিত পরিকল্পনায় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৯,২২৫ কোটি টাকা এবং সম্ভাব্যতা যাচাই ও পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে বরাদ্দ ছিল ৬৩ কোটি টাকা।

প্রকল্পের আওতায় পদ্মার শাখা নদীগুলোতে পানি সরবরাহ, মাটির আর্দ্রতা রক্ষা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ২৫টি নদীর প্রবাহ পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা ছিল। মূল লক্ষ্য ছিল—দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে সেচ, নদী ও পরিবেশ রক্ষা।

গঙ্গা বাঁধ প্রকল্পের বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও বর্তমান অবস্থা:
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর কিছু জমি অধিগ্রহণ, রেস্টহাউস নির্মাণ, গবেষণা ও মডেল স্টাডি, এবং টাওয়ার নির্মাণের মতো কিছু কার্যক্রম হলেও প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়নি। মূলত ভারত-বাংলাদেশ পানি বণ্টন সংকট, উচ্চ ব্যয়, কারিগরি জটিলতা এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতার কারণে প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থায় রয়েছে এবং ‘কাগজপত্র ফাইলবন্দি’ অবস্থায় পড়ে আছে।

তবে ২০১৩ সালে এই প্রকল্পের অনুরূপ ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ হয়, ২০১৪-২০২০ সালের মধ্যে নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। পরে ভারতীয় অনুমোদনের অপেক্ষায় প্রকল্পটি আটকে যায়। ২০১৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্পকে “ত্রুটিপূর্ণ ও আত্মঘাতী” বলে উল্লেখ করেন এবং বিকল্প খুঁজে নেওয়ার নির্দেশ দেন।

ফারাক্কার প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা:
ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশের নদী অববাহিকায় শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা, নদীভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়—এসব সমস্যা নিরসনে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পাশাপাশি, চীন ও নেপালসহ গঙ্গা অববাহিকার সব দেশ মিলেই নতুন, শক্তিশালী ও আইনি বাধ্যবাধকতাসম্পন্ন চুক্তি করতে হবে। এতে পানির ন্যায্য বণ্টন, তথ্য আদান-প্রদান ও পরিবেশ সংরক্ষণ নিশ্চিত হবে।

পানির প্রবাহ, গুণগত মান ও নদীর স্বাস্থ্যের উপর নজরদারি আরো কার্যকর করতে হবে এবং তথ্য স্বচ্ছভাবে নিয়মিত আদান-প্রদান করতে হবে।

এছাড়াও নদী খনন (ড্রেজিং), প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও পুনঃব্যবহার, আধুনিক পানি শোধনাগার ও পুনর্ব্যবহার প্রযুক্তি ব্যবহার, ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার কমানো, নদীতে পলি জমা ও নদীভাঙন রোধের জন্য কার্যকর সেডিমেন্ট ম্যানেজমেন্ট পরিকল্পনা গ্রহণ, সুন্দরবনসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখা ও পরিবেশগত পুনর্বাসন কার্যক্রম চালানো, হঠাৎ পানি ছেড়ে দেওয়ার ফলে বন্যা ও শুষ্ক মৌসুমে পানিশূন্যতা মোকাবিলায় আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে হবে।

পানির সাশ্রয়, নদী সংরক্ষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা এবং গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।

ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের জন্য বহুমাত্রিক পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটের কারণ। বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত না হলে এবং upstream দেশের একতরফা পানি প্রত্যাহার চলতে থাকলে দেশের নদী, কৃষি, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকা আরও হুমকির মুখে পড়বে।

গঙ্গা বাঁধ প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য টেকসই সমাধানের সম্ভাব্য পথ—যদি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, পরিবেশগত ভারসাম্য ও কারিগরি দক্ষতার সমন্বয়ে দ্রুত ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়।

অন্যথায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পরিবেশ ও অর্থনীতি আরও সংকটে পড়বে। তাই, ফারাক্কার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গঙ্গা বাঁধ প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও আন্তর্জাতিক পানি ন্যায্যতার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার করা জরুরি।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট

১৪৮ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
মতামত নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন