কুমারখালীর ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় উদ্দীপ্ত শেখ সাদীর ভাষণে দেশপ্রেমের বার্তা

শনিবার, ১০ মে, ২০২৫ ১:০৬ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় নেতা এবং এশিউর গ্রুপের চেয়ারম্যান শেখ সাদী বলেন, “এই কুমারখালীর মাটি আজ থেকে শতশত বছর আগে বিখ্যাত মনুষের জন্ম হয়েছে। বিশ্ব কবি রবীন্দ্র ঠাকুর এখানে দীর্ঘ ৩০ বছর পদচারণা ছিল।
কয়া গ্রামে বিপ্লবী বাঘা যতীনের জন্ম। লালন সাঁইয়ের আখড়াবাড়ি কুমারখালীতে। মীর মোশাররফ হোসেন বিষাদ সিন্ধু লিখেছেন এই কুমারখালীতে বসে। কাঙাল হরিনাথ মজুমদারও এই এলাকার একজন গুণীজন। এই গুণী ব্যক্তিদের জন্যই কুমারখালীর মাটি আজ ধন্য। কুষ্টিয়াকে যে সংস্কৃতির রাজধানী বলা হতো, এইসব ব্যক্তিদের কর্মকাণ্ডের কারণে।”
শনিবার, ১০ মে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, “একটি প্রতিষ্ঠান, একটি সমাজ, একটি এলাকা, উন্নয়ন, বিভিন্ন সেক্টরের ডেভেলপমেন্ট সমাজের উচ্চমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য এই বিশেষ ব্যক্তিদের অবদান অপরিহার্য। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে গেলে আমাদের যেমন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা করতে হবে, তেমনি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেম ও সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে হবে। এই সকল মহান ব্যক্তিত্বের অবদান আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।”
শেখ সাদী রবীন্দ্রনাথের জীবন ও কর্মের প্রসঙ্গ এনে বলেন, “রবীন্দ্রনাথ একজন বিশ্ব কবি। তিনি শুধু কবি ছিলেন না, তিনি লেখক, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার এবং ব্যবসায়ী। এই বহুমুখী প্রতিভার জন্যই তিনি বিশ্বজোড়া স্বীকৃতি পেয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ এলাকার মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতেন। সন্ধ্যার পর আড্ডা দিতেন, শিলাইদহের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার আয়োজন করতেন। এখানে তিনি তাঁর কর্মজীবনের পাশাপাশি লেখালেখিতেও পারদর্শী ছিলেন। এই এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন, এবং সব সময় মানবতার কল্যাণে সচেষ্ট ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি, চিত্রকলা ও অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য তার নাম ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। তিনি এখানে বসেই গীতাঞ্জলির অন্যতম অংশ লিখেছিলেন, যা আজও বিশ্বজুড়ে পাঠকের হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলেছে।”
শেখ সাদী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “গত পনেরো বছর আমি এখানে আসতে পারিনি, কারণ আমাদের ওপর কিছু অন্যায় ও নির্যাতন চালানো হয়েছে। আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। রবীন্দ্রনাথও কখনও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি। তিনি আমাদের মাঝে আছেন, কারণ তিনি মানুষের হৃদয়ে বাস করেন। যারা এই দেশের মাটি, বাতাস ও সংস্কৃতি নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, তারা এখন আমাদের মধ্যে নেই। তাই আমাদের জীবন ও চলার পথ এমন হতে হবে, যেন কখনো আমাদের দেশ অন্যের হাতে চলে না যায়।”
তিনি আরও বলেন, “ভালো লোক ছাড়া ভালো কাজ সম্ভব নয়। সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের উপর আমাদের অনেক কিছু নির্ভর করে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও কৃষি ক্ষেত্রের অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘এদেশের স্বাধিকার ও উন্নয়নের জন্য যারা সংগ্রাম করেছেন, তাদের অবদান আমাদের সবসময় স্মরণ রাখতে হবে। আমাদের পরিবারের জন্য, দেশের জন্য ভালো কাজ করে যেতে হবে। একাদশীর মতো এই দেশকে এগিয়ে নিতে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ ”
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ খ ম কবিরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন, পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুর রহমান, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোঃ কুতুব উদ্দিন আহমেদ ও সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকার।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, গণঅধিকার পরিষদের কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক তৌকির আহম্মেদ, কুষ্টিয়া জেলা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্জু, কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, সংস্কৃতি কর্মী ও সাধারণ মানুষ।
এরআগে, কুমারখালীর আলাউদ্দিন নগর থেকে নেতাকর্মীদের বিশাল এক বহর নিয়ে যাত্রা শুরু করেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় নেতা এবং এশিউর গ্রুপের চেয়ারম্যান শেখ সাদী। এই যাত্রাপথে অসংখ্য জনতা তাকে স্বাগত জানায়, ফুলের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত করে। তিনি নেতাকর্মীদের হাতে হাত রেখে শুভেচ্ছা গ্রহণ করেন এবং তাদের উৎসাহ দেন। এই দিনটি ছিল এক আবেগময় ও ঐতিহ্যবাহী মুহূর্ত, যেখানে নেতা ও সাধারণ মানুষের মাঝে এক অপূর্ব সংযোগ দেখা গেছে।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের মধ্যে এক অনুপ্রেরণা ও দেশপ্রেমের বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে। শেখ সাদী তার ভাষণে মনে করিয়ে দিয়েছেন, “আমাদের জীবন ও চলার পথ এমন হতে হবে, যেন দেশ কখনো ছেড়ে যেতে না হয়। আমাদের উচিত সত্যের পথে থেকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করে যাওয়া।”
১৩০ বার পড়া হয়েছে