সর্বশেষ

সারাদেশ

মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চরম চিকিৎসক সংকট, অচল পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্স

মামুনুর রশীদ বাবু, নওগাঁ
মামুনুর রশীদ বাবু, নওগাঁ

শনিবার, ১০ মে, ২০২৫ ১১:১০ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
নওগাঁ জেলার বৃহত্তম এবং জনবহুল উপজেলা মান্দায় অবস্থিত ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরেই ভয়াবহ জনবল সংকট চলছে। এতে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা।

রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসে কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরছেন। অন্যদিকে, দুটি সচল অ্যাম্বুলেন্স চালকের অভাবে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যবহার হচ্ছে না, যা সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা গ্রহণ আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এখানে চিকিৎসকের জন্য অনুমোদিত পদ রয়েছে ২৪টি। অথচ বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র চারজন চিকিৎসক, যার মধ্যে একজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও)। এই চারজন দিয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫৫০ থেকে ৬০০ রোগীকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে ছোটখাটো সমস্যা নিয়েও রোগীদের নওগাঁ জেনারেল হাসপাতাল কিংবা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং স্বাস্থ্য সহকারীরও তীব্র সংকট রয়েছে। পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিভিন্ন উপকেন্দ্র থেকে সাতজন স্বাস্থ্য সহকারীকে প্রেষণে এনে এখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে এতে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসেনি।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. তাসনিম হোসাইন আরিফ বলেন, "প্রায় এক বছর আগে আমাদের একমাত্র অ্যাম্বুলেন্স চালক অবসরে যান। তখন থেকে এখন পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স চালক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স চালানোর জন্য যে বরাদ্দকৃত তেল দেওয়া হতো, সেটিও এখন বন্ধ। ফলে লক্ষ লক্ষ টাকার দুটি সচল অ্যাম্বুলেন্স গ্যারেজে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।"

স্থানীয় বাসিন্দা ও রোগীরা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের সেবা বর্তমানে অতীতের তুলনায় অনেকটাই নাজুক। চিকিৎসকের দেখা পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। আবার বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। বিজয়পুর গ্রামের মমতাজ বিবি বলেন, "আগে আমরা এখান থেকে ওষুধ পেতাম, এখন প্রেসক্রিপশন নিয়েও বাইরের ফার্মেসিতে যেতে হয়।"

পলাশবাড়ি গ্রামের শামীম হোসেন বলেন, "বুকের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে এলেও এখানে হৃদরোগের কোনো বিশেষজ্ঞ নেই। বাধ্য হয়ে এখন রাজশাহীতে যেতে হবে। এতে সময়, টাকা—দুইই বেশি খরচ হচ্ছে।"

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগে মাত্র দুটি কক্ষে দুইজন চিকিৎসক রোগী দেখছেন। ভোর থেকে লাইন ধরেও রোগীরা চিকিৎসকের দেখা পাচ্ছেন না। অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন সেবা না পেয়ে। হাসপাতালের গ্যারেজে দুটি অ্যাম্বুলেন্স পড়ে থাকলেও বাইরে থেকে গেট তালাবদ্ধ। এমন অবস্থায় রোগীরা বাধ্য হয়ে উচ্চমূল্যে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে রাজশাহী বা নওগাঁ যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মাহবুবুজ্জামান সেতু বলেন, “সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালু থাকলে রাজশাহী যেতে হাজার টাকার মতো লাগত, এখন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। এটা একেবারেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।”

এই সংকটের ব্যাপারে জানতে চাইলে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহা. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “মাত্র চারজন চিকিৎসক দিয়ে আমরা জরুরি ও অন্তর্বিভাগ চালিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। জনবল সংকট নিরসনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই কিছু সমাধান আসবে।”

এদিকে নওগাঁ জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মুনীর আলী আকন্দ বলেন, “শুধু মান্দা নয়, পুরো জেলাতেই চিকিৎসক সংকট রয়েছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স চালক নিয়োগের ব্যাপারেও চিঠি পাঠানো হয়েছে।”

উল্লেখ্য, মান্দা উপজেলা ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এবং লোকসংখ্যা পাঁচ লাখেরও বেশি। এই জনসংখ্যার তুলনায় এত বড় একটি হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম চারজন চিকিৎসকের ওপর নির্ভর করা জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সহায়ক জনবল ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু না করা হলে ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে—এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।

১১৫ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন