সর্বশেষ

সারাদেশ

উপকূলের পানিবণ্টনে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অব্যবস্থাপনা: সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের চিত্র

খুলনা প্রতিনিধি
খুলনা প্রতিনিধি

বৃহস্পতিবার , ৮ মে, ২০২৫ ১২:২৭ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
উপকূলীয় অঞ্চলের পানির সংকট দিন দিন মারাত্মক আকার ধারণ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় বহু জেলার শতাধিক উপজেলায় খাওয়ার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকাগুলোর সুপেয় পানির জন্য মানুষ হন্যে হয়ে ঘুরছেন, অথচ সরকারের বরাদ্দকৃত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে জটিলতা, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে সুবিধা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। এই প্রতিবেদনে উপকূলীয় পানির সংকটের পেছনের মূল সমস্যা, প্রকল্পের অপব্যবহার ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হলো।

সাধারণ মানুষের অবস্থা: পানি সংগ্রহের কষ্ট
দাকোপের পশ্চিম বাজুয়া গ্রামের মীরা ও তার স্বামী দিনমজুর। বিকেলের দিকে পুকুর থেকে পানি সংগ্রহের জন্য তারা গ্রামে ঘুরে বেড়ান। আশপাশে যেখানে খাওয়ার পানির ব্যবস্থা নেই, সেখানে নদীর শুকিয়ে যাওয়া মধ্য দিয়ে হাঁটাপথে পানি আনতে হয়। গরমের সময় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত পানির ট্যাংক পাওয়ার জন্য তারা ও অন্য গ্রামবাসীরা নানা ভোগান্তির মুখোমুখি হচ্ছেন। অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে পানির উৎসগুলো মূলত দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে পরিণত হয়েছে।

সরকারের উদ্যোগ ও দুর্নীতির চিত্র
সরকারি বরাদ্দে বিভিন্ন প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও উপকূলের মানুষ পানির জন্য যথাযথ সুবিধা পাচ্ছেন না। গভীর ও অগভীর নলকূপ, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ইউনিট, পিএসএফসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও দুর্নীতি, অনিয়ম এবং স্বজনপ্রীতির কারণে সুবিধা পৌঁছায় না সাধারণ ভুক্তভোগীর দোরগোড়ায়। পানির ট্যাংক ও অন্যান্য সরঞ্জাম দেওয়ার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ঘুষ ও টাকা দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং টাকার বিনিময়ে পানির উৎস বিক্রির ঘটনাও প্রকাশ পেয়েছে।

প্রকল্পের বাস্তবায়নে সমস্যা
সরকারের রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্রকল্পের বরাদ্দ থাকলেও প্রকৃত সুবিধা পেয়ে থাকছেন খুবই কম মানুষ। তালিকা তৈরি, প্রকল্পের পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়ন ও বিতরণের প্রক্রিয়া অপ্রতুল ও অনিয়মের শিকার। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, সুবিধা পাওয়ার উপযুক্ত সুবিধাবঞ্চিত ও আর্থিকভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠীর অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা থাকলেও, বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। বরাদ্দকৃত ট্যাংক ও পানির উৎসের অধিকাংশই দুর্নীতির শিকার হয়ে অকেজো হয়ে পড়েছে বা বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।

রাজনৈতিক ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ভূমিকা
অভিযোগ রয়েছে, জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতা-কর্মী ও কিছু স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ট্যাংক ও অন্যান্য সুবিধার জন্য টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয়, স্বজনপ্রীতি বা অর্থের বিনিময়ে সুবিধা পাচ্ছেন অনেকে। এমনকি সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও, প্রকল্পের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা লোপ পায়। ফলে, সাধারণ উপকূলবাসী সুবিধা না পেয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।

নির্বাচনী রাজনীতি ও দুর্নীতির সংযোগ
উপকূলের পানির সংকটের সঙ্গে রাজনীতি ও ভোটের সম্পর্কও গভীর। কিছু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা নিজের স্বার্থে ট্যাংক বিতরণে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন। ট্যাংক বিক্রির জন্য স্বচ্ছ নীতির অভাব, অর্থের বিনিময়ে সুবিধা, আর্থিক লেনদেন ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।

উপকূলীয় পানির সংকট নিরসনে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ থাকলেও, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের কারণে সুবিধা পাচ্ছেন না প্রকৃত প্রয়োজনীয় জনগোষ্ঠী। পানির নিরাপদ উৎস ও প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারি, স্বচ্ছতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরদার পদক্ষেপ প্রয়োজন। সাধারণ মানুষ চান, যেন তাদের ন্যায্য পানির অধিকার নিশ্চিত হয় এবং সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের সুফল প্রত্যাশিতভাবে পৌঁছে যায় তাদের দোরগোড়ায়।

১২৭ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন