চারগুণ বেড়েছে আলু রপ্তানি, সামনে লক্ষ্যমাত্রা ৬০ হাজার টন ছাড়ানোর

বৃহস্পতিবার , ৮ মে, ২০২৫ ৪:১৮ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
আলু উৎপাদনে বিশ্বে সপ্তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ এবার রপ্তানিতেও বড় ধরনের অগ্রগতি দেখিয়েছে।
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত (৫ মে) বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে ৪৮ হাজার ১৭৭ টন আলু, যা গত বছর (২০২৪ সালে) রপ্তানিকৃত মাত্র ১২ হাজার ১১২ টনের তুলনায় চারগুণ বেশি। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, মৌসুম শেষে রপ্তানির পরিমাণ ৬০ হাজার টন ছাড়িয়ে যাবে।
রপ্তানি বৃদ্ধির পেছনে একাধিক কারণ দেখছেন রপ্তানিকারকরা। তাদের মতে, দেশে ভালো উৎপাদন, তুলনামূলক কম দাম, বিশ্ববাজারে চাহিদা বৃদ্ধি, জাহাজ ভাড়া কমা, সরকারি সহায়তা এবং ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক উত্তেজনার সুফল—সব মিলিয়েই এবারের রপ্তানি বেড়েছে।
রপ্তানিতে ফিরছে পুরনো গতি
একসময় বছরে এক লাখ টনের বেশি আলু রপ্তানি করত বাংলাদেশ। তবে সেই গতি গত এক দশকে হারিয়ে যায়। ২০১৯ সালে ৫৬ হাজার টন এবং ২০২০ সালে ৫১ হাজার টনের রপ্তানি হলেও পরবর্তী বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে কমে আসে। গত বছর রপ্তানি নেমে আসে মাত্র ১২ হাজার টনে।
প্রতিযোগীর পিছু হটায় বাড়তি সুযোগ
জিল ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হায়দার বলেন, “এবার আলুর দাম কম এবং আমদানিকারক দেশগুলোতে চাহিদা বেশি। পাকিস্তান এবার সেভাবে রপ্তানি না করায় সেই অর্ডারগুলো বাংলাদেশ পাচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, জাহাজ ভাড়া কমে যাওয়ায় এখন প্রতিটন আলু ২৬০-২৮০ ডলারে রপ্তানি করা যাচ্ছে। ডলারের মূল্য বৃদ্ধির ফলে রপ্তানিকারকদের মুনাফাও বেড়েছে।
‘সানসাইন’ আলুর দাপট
বাংলাদেশ আলু রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি ফেরদৌসী বেগম বলেন, “বিআইডিসি গত বছর ‘সানসাইন’ নামে একটি নতুন জাতের আলু বাজারে এনেছে। এবছর এই আলু প্রচুর রপ্তানি হচ্ছে। আকার, রঙ এবং মান ভালো হওয়ায় এর দামও ভালো মিলছে।”
তিনি আরও জানান, মালয়েশিয়ায় আরও এক মাস এবং নেপালে জুলাই পর্যন্ত আলু রপ্তানি চলবে। সরকারের পক্ষ থেকে বিআরটিসির মাধ্যমে বন্দরে পরিবহনের সুবিধা দেওয়ায় খরচ অর্ধেকেরও কমে এসেছে, যা রপ্তানিকারকদের বড় সহায়তা দিয়েছে।
বাজারে বাংলাদেশের উপস্থিতি, কিন্তু শীর্ষ দশে নয়
বাংলাদেশের আলু মূলত মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, বাহরাইনসহ ১৪টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এক সময় রাশিয়ায়ও আলু যেত, তবে এখন আর সেভাবে যাচ্ছে না।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আলু রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ৩৩ মিলিয়ন ডলার। তবে পরবর্তী বছরগুলোতে তা এক-তৃতীয়াংশের নিচে নেমে আসে এবং বেশ কয়েক বছর ধরে ১০ মিলিয়নের বেশি হয়নি।
রপ্তানিতে প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে
উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা থাকলেও এখনো বাংলাদেশের আলু রপ্তানিতে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো রপ্তানিযোগ্য আলুর জাতের সংকট। দেশে ৯১টি জাত থাকলেও অধিকাংশের আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা নেই।
বাংলাদেশে উৎপাদিত আলুতে শুষ্ক পদার্থের পরিমাণ কম থাকায় তা চিপস বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের জন্য উপযুক্ত নয়। অধিক স্টার্চ থাকার কারণে এসব আলু মচমচে হয় না এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে অতিরিক্ত জ্বালানি লাগে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, “সরকার উচ্চ ফলনশীল ও রপ্তানিযোগ্য জাত সম্প্রসারণে কাজ করছে। কিছু জাত এসেছে, যা থেকে দ্বিগুণ উৎপাদন সম্ভব হবে।”
তালিকায় পাকিস্তান এগিয়ে, বাংলাদেশ পেছনে
আলু উৎপাদনে নবম হলেও পাকিস্তান বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম রপ্তানিকারক দেশ। গড়ে ৮০ লাখ টন উৎপাদন করেও তারা বছরে ১০ লাখ টনের বেশি আলু রপ্তানি করে। অথচ বাংলাদেশে বছরে এক কোটির বেশি টন উৎপাদন হলেও রপ্তানির হার কখনো উৎপাদনের এক শতাংশেও পৌঁছায়নি।
বিশ্ববাজারে আলু রপ্তানির বার্ষিক গড় হার যেখানে ৬.২৫ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি অংশগ্রহণ এখনও উল্লেখযোগ্য নয়। তবে চলতি মৌসুমের সফলতা প্রমাণ করে, সঠিক উদ্যোগে বাংলাদেশের আলু রপ্তানি আবারও পুরনো অবস্থানে ফিরতে পারে।
১২০ বার পড়া হয়েছে