সিলেটে প্রবীণ আইনজীবী শামসুল ইসলাম চৌধুরী হত্যা: তিনজনের মৃত্যুদণ্ড

মঙ্গলবার, ৬ মে, ২০২৫ ২:৩১ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
সিলেটের প্রবীণ আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি শামসুল ইসলাম চৌধুরী হত্যার ঘটনায় তার ছেলে মাসউদ আহমদ চৌধুরী মুন্নাসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত।
মঙ্গলবার (৬ মে) আদালতের বিচারক মো. শাহাদৎ হোসেন প্রামাণিক এই রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর দুই আসামি হলেন সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার আব্দুল লতিফের ছেলে মো. জাহের আলী এবং ছাতক উপজেলার সুরুজ আলীর ছেলে মো. আনসার আহমেদ। তাদের প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া মামলার অন্য আসামি মাইক্রোবাস চালক মো. বোরহান উদ্দিনকে ৩ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অপরদিকে, মামলার অন্য এক আসামি মো. ইসমাইল হোসেন রানুর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন।
বিচারক জানিয়েছেন, রায় ঘোষণার সময় কোনো আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন না এবং তারা সবাই পলাতক। আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আনছারুজ্জামান রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবেবরাতের রাতে শামসুল ইসলাম চৌধুরী নিখোঁজ হন। পরদিন তার ছেলে মুন্না কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন এবং কিছুদিন পর মুন্না ভারত পালিয়ে যান। হত্যাকাণ্ডের তিন সপ্তাহ পর শামসুল ইসলামের বড় ছেলে মাহমুদ আহমদ চৌধুরী কোতোয়ালি থানায় তার ভাই মুন্নাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
র্যাব-৯ এর সদস্যরা আনসার আহমেদ, বোরহান উদ্দিন ও ইসমাইল হোসেন রানুকে গ্রেফতার করে। তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তদন্তে জানা যায়, শবেবরাতের রাতে মুন্না তার বাবাকে হত্যা করতে আনসার ও জাহের আলীকে ডেকে নিয়ে আসেন। এরপর তারা শামসুল ইসলামের হাত-মুখ চেপে ধরে এবং মুন্না তার বাবার শরীরে ইনজেকশন পুশ করে এবং গামছা দিয়ে পাথর দিয়ে তার ঘাড়ে আঘাত করেন। পরে তিনজন মিলে শামসুল ইসলামকে কোমর ভেঙে একটি প্রাইভেটকারে করে সুরমা নদীতে ফেলে দেন।
মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে র্যাব গামছা, পাথর, প্রাইভেটকার এবং ইনজেকশনের সিরিঞ্জ উদ্ধার করে। পরে, ভারত থেকে আসা একটি ফোনকলের মাধ্যমে জানা যায় যে, শামসুল ইসলামের মরদেহ সুনামগঞ্জের ছাতকের সুরমা নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষায় তার পরিচয় নিশ্চিত হয়।
মামলার বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ এক দশক ধরে চলতে থাকলেও সিলেট বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার শুনানি শেষ করে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে এই রায় প্রদান করে। ৩০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন, এবং চলতি বছরের মার্চে মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়ে এপ্রিলের শেষের দিকে যুক্তিতর্ক ও শুনানি শেষ হয়।
পিপি আনছারুজ্জামান বলেন, “এ রায় স্বাভাবিকভাবেই একটি দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ার পর সুষ্ঠু বিচারের প্রতিফলন।”
এ রায়ের মাধ্যমে এক যুগ ধরে ঝুলে থাকা একটি জঘন্য হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ হলো।
১০৯ বার পড়া হয়েছে