বাংলাদেশ-পাকিস্তান সীমান্তে ‘ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার’ স্থাপনের উদ্যোগ ভারতের

সোমবার, ৫ মে, ২০২৫ ৫:১৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
ভারত সরকার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স) জন্য ১৬টি নতুন ব্যাটালিয়ন গঠনের চূড়ান্ত অনুমোদনের পথে রয়েছে। একইসঙ্গে পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে দুইটি ‘ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার’ বা ফিল্ড কমান্ড ঘাঁটি স্থাপনেরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সরকারি সূত্রের বরাতে ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিটি ব্যাটালিয়নে এক হাজারেরও বেশি সদস্য থাকবে এবং সব মিলিয়ে প্রায় ১৭ হাজার নতুন সদস্য বিএসএফে যুক্ত হবেন। বর্তমানে বাহিনীর ১৯৩টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে; নতুন ইউনিটগুলো গঠিত হলে সদস্য সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। ইতিমধ্যে পরিকল্পনাটি নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে এবং এখন কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলে আগামী পাঁচ থেকে ছয় বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে ইউনিটগুলো গঠন করা হবে।
নতুন ‘ফরোয়ার্ড হেডকোয়ার্টার’-এর একটি স্থাপন করা হবে জম্মুতে, যা ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত, বিশেষ করে জম্মু ও পাঞ্জাব অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদারে কাজ করবে। অপরটি হবে মিজোরামে, যা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি ও গোয়েন্দা তৎপরতা আরও কার্যকর করবে। এই দুটি ঘাঁটি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বিএসএফের কর্মকৌশল, সমন্বয় এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়ায় সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সীমান্ত পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে, একইসঙ্গে কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড পাকিস্তান সীমান্তে নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ভারত সরকার বিএসএফের সক্ষমতা বাড়াতে এই উদ্যোগ নিচ্ছে।
বর্তমানে বিএসএফের পূর্ব ফ্রন্টিয়ারে আসামভিত্তিক মিজোরাম-কাছার হেডকোয়ার্টারের অধীনে শিলচর, আইজল ও মণিপুরে তিনটি সেক্টর এবং পশ্চিম ফ্রন্টিয়ারে জম্মু সীমান্তে রাজৌরি, সুন্দরবনি, জম্মু ও ইন্দ্রেশ্বর নগরে চারটি সেক্টর রয়েছে, যেখানে ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) পদমর্যাদার কর্মকর্তারা দায়িত্বে আছেন। নতুন হেডকোয়ার্টার স্থাপনের ফলে এই সেক্টরগুলোতে সমন্বয় আরও দৃঢ় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিএসএফ ইতোমধ্যে পুরুষ ও নারী সদস্য নিয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিয়োগ শেষে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন ব্যাটালিয়নগুলো কার্যক্রম শুরু করবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে বিএসএফের ২ লাখ ৭০ হাজার সদস্য রয়েছে এবং তারা ৬ হাজার ৭২৬ কিলোমিটার সীমান্ত রক্ষা করছে—এর মধ্যে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত ২ হাজার ২৯০ কিলোমিটার ও ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ৪ হাজার ৯৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৪৭ কিলোমিটার এখনো সুরক্ষাবেষ্টনীহীন, যা নদী ও বনাঞ্চল পেরিয়ে গেছে। সীমান্তে বিএসএফের প্রায় ১ হাজার ৭৬০টি চৌকি রয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দ্রুত পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা ও সীমান্তের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই নতুন ইউনিট ও হেডকোয়ার্টার বিএসএফের কৌশলগত অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।
১২১ বার পড়া হয়েছে