সর্বশেষ

সারাদেশ

নওগাঁয় মাদক মামলায় পুলিশের গাফিলতি: আদালতে হাজিরা দিতে নির্দেশ ওসিকে

মামুনুর রশীদ বাবু, নওগাঁ
মামুনুর রশীদ বাবু, নওগাঁ

রবিবার, ৪ মে, ২০২৫ ১২:৫৪ অপরাহ্ন

শেয়ার করুন:
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ভরতেঁতুলিয়া গ্রামে মাদকাসক্ত ১১ জন আসামিকে নিয়মিত আদালতে উপস্থাপন না করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়ায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনকে আদালতে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন নওগাঁর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রবিউল ইসলাম।

আদালত আগামী ১২ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ওসিকে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে তার ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন।

ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট অনুসন্ধান করে জানা যায়, গত ২৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে আত্রাই উপজেলার ভরতেঁতুলিয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ১১ জন মাদকসেবীকে আটক করে। এরপর তাদেরকে থানা হেফাজতে না রেখে সরাসরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়। এ ঘটনার খবর বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে তা নওগাঁর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নজরে আসে।

বিষয়টি আমলে নিয়ে আদালত তদন্ত করে দেখতে পান, পুলিশ আটককৃত আসামিদের ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ৬১ ধারা মোতাবেক নিয়মিত মামলা রুজু না করে ও ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থাপন না করে সরাসরি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে শাস্তি প্রদান করেছে। এতে মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এবং পুলিশ আইন, ১৮৬১ এর ২৯ ধারা লঙ্ঘিত হয়েছে।

এ বিষয়ে আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোঃ খোরশেদ আলম বলেন, “বিষয়টি আদালতের নজরে আসার পর তদন্তে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, ওসি মহোদয়ের নির্দেশনায় আইনি প্রক্রিয়া এড়িয়ে সরাসরি ইউএনও অফিসে নেওয়া হয়েছিল আসামিদের। এটা স্পষ্টভাবে প্রচলিত আইন ও বিধির লঙ্ঘন।”

এদিকে গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে মুঠোফোনে আত্রাই থানার ওসি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, “বিজ্ঞ আদালত আমাকে শোকজ করেছে একথা আমি শুনেছি। তবে এখনো আদেশের কাগজ হাতে পাইনি। কপি হাতে পেলে আদালতে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা প্রদান করব।”

আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীদের মতে, মাদকসেবী কিংবা কোনো ফৌজদারি আসামিকে আটক করলে তাৎক্ষণিকভাবে নিয়মিত মামলা রুজু করে আদালতের কাছে উপস্থাপন করতে হয়। অন্যথায় এটি আটককারীর দায়িত্বে গাফিলতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে গণ্য হয়। এ ধরনের ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তাদের আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উল্লেখ্য, মোবাইল কোর্ট আইন অনুযায়ী কোনো অপরাধ ঘটার সময় বা ঘটনার স্থানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তাৎক্ষণিক বিচার ও শাস্তি প্রদান করা সম্ভব, তবে আটক ব্যক্তিকে থানায় নেওয়ার পর পুনরায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া আইনসিদ্ধ নয়। এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

১১৮ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
সারাদেশ নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন