মে দিবসে রাজধানীতে ব্যতিক্রম চিত্র: প্রায় সব হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ

বৃহস্পতিবার , ১ মে, ২০২৫ ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
আজ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস বা ‘মে দিবস’। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিনটি সরকারি ছুটি হিসেবে পালন করা হচ্ছে।
শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত এই দিনে ঢাকায় দেখা গেছে এক ব্যতিক্রম চিত্র—প্রায় সব হোটেল ও রেস্তোরাঁ বন্ধ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, বড় হোটেল থেকে শুরু করে ফুটপাথের ঝুপড়ি খাবারের দোকান পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। হোটেল মালিকরা জানিয়েছেন, মে দিবস উপলক্ষে তাদের সব কর্মচারীকে ছুটি দেওয়া হয়েছে, যার ফলে হোটেল বন্ধ রাখা হয়েছে।
ছুটির সুযোগে হোটেল-রেস্তোরাঁর শ্রমিকরা সময় কাটাচ্ছেন খেলাধুলা, পরিবারভ্রমণ ও গ্রামের বাড়িতে গিয়ে। পুরান ঢাকার জনসন রোডের ‘স্টার হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’ এবং মতিঝিলের ‘ঘরোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’-এর কর্মীরা জানান, আজকের ছুটিতে তারা দারুণ খুশি।
ঘরোয়া হোটেলের একজন কর্মচারী বলেন, “আমাদের হোটেলে শতাধিক কর্মী আছে। সবাই আজ ছুটিতে। কেউ খেলাধুলা করছে, কেউ পরিবার নিয়ে ঘুরতে গেছে।”
রাজধানীর কলতাবাজার এলাকার ‘রাজমহল রেস্তোরাঁ’র দীর্ঘদিনের কর্মচারী মো. রাসেল জানান, “১৪ বছর কাজ করছি, আগে মে দিবসে ছুটি পাইনি। গত দুই বছর থেকে পাচ্ছি। এটি আমাদের জন্য অনেক আনন্দের।”
তবে সব হোটেল যে বন্ধ, তা নয়। অলিগলির কিছু ছোট খাবারের দোকান খোলা দেখা গেছে, যেখানে মালিক নিজেই বিক্রি করছেন। তবে এমন কিছু দোকানে ‘বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশন’-এর সদস্যদের উপস্থিতিতে জোর করে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
পুরান ঢাকার জনসন রোডের ‘অলি বিরিয়ানি হাউজ’-এ দুপুর আড়াইটার দিকে ৮-১০ জন যুবক ফেডারেশনের টি-শার্ট পরে দোকানের সাটার নামিয়ে দেন এবং দোকান বন্ধ রাখতে কড়া নির্দেশ দেন।
দোকান মালিক শাহেদ বলেন, “আমি একাই দোকান চালাই, নিজেই মালিক, নিজেই শ্রমিক। আজ দোকান বন্ধ রাখলে সংসার চলবে না। কেউ তো ক্ষতিপূরণ দেবে না। আমি কেন অযথা দোকান বন্ধ রাখবো?”
তিনি আরও জানান, “প্রতিদিন রাতে স্ত্রীকে নিয়ে রান্না করে সকালবেলা দোকানে এনে বিক্রি করি। আজ খাবার বিক্রি না হলে তা নষ্ট হবে, বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।”
এমন ঘটনায় সাধারণ ক্রেতারাও ক্ষুব্ধ। পথচারী রায়হান উদ্দিন বলেন, “হোটেল-রেস্তোরাঁর কর্মীদের ছুটি দেওয়া ভালো উদ্যোগ। কিন্তু যারা একাই দোকান চালান, তাদের জোর করে বন্ধ করানো উচিত না।”
মে দিবস শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার প্রতীক হলেও, বাস্তব প্রয়োগে শ্রমিক ও স্ব-নিয়োজিত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে বৈষম্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দিনটি নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও, সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে এ ধরনের ঘটনা।
১০৬ বার পড়া হয়েছে