সর্বশেষ

জাতীয়

এয়ার পিউরিফায়ার বসাতে চায় ডিএনসিসি, কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় গবেষকদের

স্টাফ রিপোর্টার
স্টাফ রিপোর্টার

বৃহস্পতিবার , ১ মে, ২০২৫ ৬:৫৮ পূর্বাহ্ন

শেয়ার করুন:
রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ কিছুটা কমাতে স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে নগরীর ৫০টি স্থানে এয়ার পিউরিফায়ার বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর বা টেকসই সমাধান নয়।

গত সোমবার গুলশানে নগর ভবনে আয়োজিত এক নীতিনির্ধারণী সংলাপে ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ এই পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এটি একটি পাইলট প্রকল্প। আমরা দেখতে চাই এর ফলাফল কেমন আসে। এরপর বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, এইচডিসিটি-৫১০০০ মডেলের বায়ু পরিশোধন যন্ত্রগুলো প্রতি মিনিটে ৩০ হাজার ঘনফুট বাতাস পরিশোধন করতে সক্ষম এবং ৯০ শতাংশ পর্যন্ত অতিক্ষুদ্র ধূলিকণা শোষণ করতে পারবে। প্রতিটি যন্ত্রের ওজন প্রায় ১,৫০০ কেজি এবং এটি চালাতে লাগবে ২২০ ভোল্ট বিদ্যুৎ।

ডিএনসিসি প্রশাসক জানান, এ প্রকল্পের জন্য স্পনসর পাওয়া গেছে, ফলে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করতে হচ্ছে না। চলতি মাসেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মত: “টেকসই সমাধান নয়”
বায়ুদূষণ নিয়ে কাজ করা গবেষকরা বলছেন, পিউরিফায়ার স্থাপন ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরের সামগ্রিক বায়ুমান উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম বলেন, “বড় দেশগুলোতেও এ ধরনের ব্যয়বহুল প্রকল্প খুব একটা সফল হয়নি। আমাদের উচিত দূষণের মূল উৎস চিহ্নিত করে তা নিয়ন্ত্রণ করা।”

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ড. আহমেদ কামরুজ্জামান বলেন, “এটি কিছু এলাকায় স্বল্পমেয়াদি স্বস্তি দিতে পারে, তবে এটি কোনোভাবেই দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। আমাদের দেশের বাস্তবতায় এটি এখনো একটি মেডিকেল ইকুইপমেন্ট হিসেবে বিবেচ্য, সমগ্র শহরের সমস্যার সমাধান নয়।”

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, ইটভাটা, পুরোনো যানবাহন, নির্মাণস্থলের ধুলাবালি এবং শিল্প কারখানার অনিয়ন্ত্রিত নিঃসরণ বায়ুদূষণের মূল কারণ। এসব খাতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশবান্ধব নীতিমালা গ্রহণই টেকসই সমাধানের পথ।

দিল্লির ব্যর্থ স্মগ টাওয়ার প্রকল্পের উদাহরণ
বিশেষজ্ঞরা ভারতের দিল্লির উদাহরণ টেনে বলেন, ২০২১ সালে সেখানকার কনট প্লেস এলাকায় ২৪ মিটার উঁচু স্মগ টাওয়ার বসানো হলেও সেটি ৫০ মিটার এলাকার বাইরে কোনো কার্যকরতা দেখাতে পারেনি। ভারতের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর মতে, এ ধরনের পিউরিফায়ার বাস্তবসম্মত সমাধান নয়।

ঢাকার ভয়াবহ বায়ুমান
বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (CAPS)-এর তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ বছরে ঢাকার মানুষ মাত্র ৩১ দিন নির্মল বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছেন। ৮৫৩ দিন ছিল ‘অস্বাস্থ্যকর’ ও ৯৩ দিন ‘দুর্যোগপূর্ণ’। ২০২৪ সালের আইকিউএয়ারের প্রতিবেদনে, বায়ুদূষণে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় এবং ঢাকা ছিল শহরগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে।

টেকসই সমাধানে করণীয়
অধ্যাপক সালাম বলেন, “সমাধান আসছে না কারণ কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। আমরা শুধু আলোচনা করি, বাস্তবায়ন করি না।” তিনি এবং অন্যান্য গবেষকেরা পুরোনো যানবাহন নিষিদ্ধ করা, ইটভাটা বন্ধ, নির্মাণস্থলে ধুলা নিয়ন্ত্রণ, সবুজায়ন এবং বায়ুমান পর্যবেক্ষণকে স্থায়ী সমাধানের উপায় হিসেবে উল্লেখ করেন।

১০৯ বার পড়া হয়েছে

শেয়ার করুন:

মন্তব্য

(0)

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন

২৫০ x ২৫০

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
৩২০ x ৫০
বিজ্ঞাপন