মে দিবস: ১৪০ বছর পরও অধরাই থেকে গেছে কোটি কোটি শ্রমিকের স্বপ্ন

বৃহস্পতিবার , ১ মে, ২০২৫ ৪:৫৯ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
শ্রমিকের ঘাম আর শ্রমে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকলেও তাঁদের জীবনমানে এখনো লক্ষণীয় উন্নতি হয়নি।
১৪০ বছর আগে শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার আদায়ের যে চেতনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল মহান মে দিবস, আজও সেই চেতনা অধরাই থেকে গেছে কোটি শ্রমজীবী মানুষের জীবনে।
এ বছর মহান মে দিবসের প্রতিপাদ্য — ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে।’ — হলেও বাস্তবে শ্রমিকদের ন্যূনতম অধিকার আদায়ে এখনো রাস্তায় নামতে হয়। হঠাৎ করে চাকরি হারানো, মালিকের স্বেচ্ছাচারিতা, ন্যূনতম মজুরির অভাব—এসব এখনো শ্রমজীবী মানুষের প্রতিদিনের বাস্তবতা।
আইন আছে, কার্যকর নেই
শ্রম খাত বিশ্লেষকদের মতে, শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে আইন থাকলেও তার বাস্তব প্রয়োগে রয়েছে সীমাবদ্ধতা। দেশে মূলত তৈরি পোশাক খাতেই শ্রম আইনের কিছুটা প্রয়োগ দেখা যায়, কিন্তু অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত—যেখানে বিশালসংখ্যক শ্রমিক নিযুক্ত—সেখানে আইন কার্যত অচল।
শ্রম সংস্কার কমিশনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশের শ্রমনীতি ও ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন না এলে অর্থনীতির অগ্রযাত্রাও বাধাগ্রস্ত হবে।
প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবায়ন অনিশ্চিত
রাষ্ট্রীয় পটপরিবর্তনের পর শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে গঠিত হয়েছে জাতীয় শ্রম সংস্কার কমিশন। এই কমিশন ন্যূনতম জাতীয় মজুরি নির্ধারণ এবং তা মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয়ের সুপারিশ করেছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলেও বাস্তবে এখনও তা বাস্তবায়ন অনিশ্চিত।
কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ জানান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নতুন কর্মপরিকল্পনায় পোশাক খাত ছাড়াও অন্যান্য খাতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আগে যেখানে শতভাগ নজর পোশাক শিল্পে ছিল, এখন সেটা ৫০ শতাংশ পোশাক এবং ৫০ শতাংশ অন্যান্য খাতে ভাগ করা হয়েছে।
মে দিবসে আইনানুগ নির্দেশনা
মে দিবস উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক স্মারকে বলা হয়েছে, যৌক্তিক কারণ ও শ্রম আইন অনুসরণ ছাড়া কোনো শ্রমিককে চাকরিচ্যুত বা ছাঁটাই করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি বাধ্যতামূলক। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, মহান মে দিবসে সব কারখানা ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। নির্দেশনা অমান্য করলে মালিকের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা।
একটি ঐতিহাসিক আন্দোলনের গৌরব
১৮৮৬ সালের ১ মে, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমিকেরা দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান অনেক শ্রমিক। সেই আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতে আজ বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে মে দিবস পালিত হচ্ছে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে।
মে দিবস শুধু ছুটির দিন নয়; এটি শ্রমজীবী মানুষের মর্যাদা, অধিকার ও ন্যায্যতার প্রতীক। এই দিনের গুরুত্ব গণমাধ্যমে প্রতিবেদন, আলোচনা ও প্রচারের মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হচ্ছে।
শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত না হলে কোনো উন্নয়নই টেকসই হবে না—এই সত্য বারবার প্রমাণিত হয়েছে। মহান মে দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, শ্রমিকের হাত ধরেই বদলানো সম্ভব দেশের ভবিষ্যৎ।
১০৮ বার পড়া হয়েছে