ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধে সরাসরি প্রভাবিত হতে পারে বাংলাদেশ

সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ১০:০৩ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
পেহেলগাম হামলার পর নতুন করে উত্তপ্ত ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। সীমান্তে সেনা মোতায়েন ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তেজনার পারদ চরমে।
দক্ষিণ এশিয়ায় সম্ভাব্য সংঘাতের অভিঘাতে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ।
কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করার পর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা আবারও তীব্র আকার ধারণ করেছে। পাকিস্তান পাল্টা অভিযোগে ভারতকে দায়ী করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে সীমান্তে দুই দেশের সেনা প্রস্তুতি, সামরিক মহড়া ও প্রযুক্তিগত তৎপরতায় যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে।
২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদি সরকারের সময় কাশ্মীরের বিশেষ স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর অঞ্চলটিতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বিনিয়োগ বাড়ানো হয়। ভারত সরকারের দাবি ছিল, এতে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক হামলা সেই ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ভারতীয় গোয়েন্দা ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়েছে।
সীমান্তে সামরিক উত্তেজনা চরমে
পাকিস্তান সীমান্ত এলাকায় সেনা মোতায়েন ও ড্রোন ব্যবহার বাড়িয়েছে। বিশেষ করে তুরস্কের তৈরি বায়রাক্তার ড্রোন মোতায়েন ভারতীয় মিডিয়ায় উদ্বেগ তৈরি করেছে। অপরদিকে ভারতও সীমান্ত ঘাঁটিগুলোতে সেনা ও অস্ত্র সমাবেশ জোরদার করেছে। সামরিক মহড়া চালানো হচ্ছে নিয়মিত। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশই আংশিক যুদ্ধ প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা
দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষ হলে তা শুধু সীমান্তে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং দ্রুত পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে। এতে দক্ষিণ এশিয়ার কোটি কোটি মানুষ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। খাদ্য, পানি ও পরিবেশ সংকট তৈরি হবে, এবং দীর্ঘমেয়াদে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়বে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: শান্তির আহ্বান, পক্ষাবলম্বনের সংকেত
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ভারতপক্ষে অবস্থান নিলেও চীন ও রাশিয়া তুলনামূলক সংযত মনোভাব দেখাচ্ছে। চীন পাকিস্তানের মিত্র হলেও বড় যুদ্ধে আগ্রহী নয়। রাশিয়া শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন দুই পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশের উদ্বেগ ও প্রস্তুতি
ভৌগোলিক অবস্থান এবং ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরাসরি প্রভাবিত হতে পারে। সীমান্ত নিরাপত্তা, শরণার্থী সংকট, অর্থনৈতিক চাপ এবং কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা—সব দিক থেকেই বাংলাদেশকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে হচ্ছে।
সরকার ইতোমধ্যেই সীমান্ত এলাকায় বিজিবি ও অন্যান্য বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলেছে। শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে আগাম সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে খাদ্য ও জ্বালানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিকল্প উৎস খোঁজার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা
যুদ্ধ শুরু হলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে, যার অভিঘাত সরাসরি পড়বে বাংলাদেশের বাজারে। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হলে শিল্পখাতে কাঁচামাল সংকট তৈরি হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের প্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমবাজারও সংকুচিত হতে পারে, যা রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশের কৌশল: নিরপেক্ষতা ও শান্তির পক্ষে অবস্থান
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এখনই কোনো মধ্যস্থতার উদ্যোগ নিতে চায় না। তবে দুই দেশ আহ্বান জানালে বাংলাদেশ সহায়তার জন্য প্রস্তুত। তার মতে, বাংলাদেশের অবস্থান হবে 'শান্তিপ্রিয়, দায়িত্বশীল রাষ্ট্র' হিসেবে কাজ করা। আন্তর্জাতিক ফোরামে শান্তির পক্ষে কণ্ঠস্বর তুলে ধরতে চায় ঢাকা।
সম্ভাব্য কূটনৈতিক সুযোগ
পরিস্থিতির ভয়াবহতার মধ্যেও বাংলাদেশ যদি কৌশলগতভাবে শান্তিপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তবে আঞ্চলিক কূটনীতিতে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা ও নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা পাবে। এতে ভবিষ্যতে বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।
১০৫ বার পড়া হয়েছে