ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা চরমে, সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা

সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫ ৯:২৭ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
কাশ্মীরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী এই দুই দেশের মধ্যে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রোববার (২৭ এপ্রিল) নিউইয়র্ক টাইমস-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত উত্তেজনা প্রশমনের পরিবর্তে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক ডজনেরও বেশি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে ফোনালাপ করেন। একইসঙ্গে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত ১০০টিরও বেশি দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, এসব উদ্যোগ শান্তি প্রচেষ্টার অংশ নয় বরং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অভিযানের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কাশ্মীরের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি সন্ত্রাসী ঘাঁটি ধ্বংস এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিলেও, তিনি সরাসরি পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করেননি।
অন্যদিকে, কাশ্মীরে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে। সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত সন্দেহে শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ভারত ইতোমধ্যেই পাকিস্তানমুখী নদীগুলোর পানিপ্রবাহ বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে এবং নয়াদিল্লিতে পাকিস্তানি দূতাবাসের কিছু কর্মী ও সফররত নাগরিকদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান কাশ্মীর সীমান্তে (এলওসি) যুদ্ধবিরতির মতো দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে।
এই উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ভারতে মুসলিম-বিরোধী মনোভাব বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কাশ্মিরি শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন শহরে হয়রানির শিকার হয়ে বাধ্য হচ্ছেন বাড়ি ফিরে যেতে।
তবে হামলার পাঁচ দিন পরও ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নাম প্রকাশ করেনি। পাকিস্তানের জড়িত থাকার প্রমাণও খুব সীমিতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও ভারতীয় কর্মকর্তারা দাবি করছেন, তদন্তে হামলাকারীদের পাকিস্তানের সঙ্গে প্রযুক্তিগত সংযোগের কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইরান ও সৌদি আরব দুই দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় শক্তিগুলো এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়নি।
নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ভারতের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তর্জাতিক চাপের প্রভাব আগের তুলনায় কমে গেছে। ফলে ভারত চাইলে একতরফা সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, ২০১৬ ও ২০১৯ সালের মতো এবারও ভারত সীমান্ত পেরিয়ে বড় ধরনের অভিযান চালাতে পারে, যার পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত পাকিস্তান। ইসলামাবাদ জানিয়েছে, ভারতের যেকোনো আগ্রাসনের চেয়ে ‘আরও বড় প্রতিক্রিয়া’ জানানো হবে।
পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্লেষক ড্যানিয়েল মার্কি সতর্ক করে বলেছেন, “উভয় পক্ষই নিজেদের ক্ষমতা অতিমূল্যায়ন করছে। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।”
এক কূটনীতিকের মতে, “শুধু অতীতের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর সঙ্গে সংঘাতে জড়ানো কতটা যৌক্তিক, তা নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।”
১০৬ বার পড়া হয়েছে