ইচ্ছামত অফিস করেন “বদলগাছি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা”

রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ৬:০৪ পূর্বাহ্ন
শেয়ার করুন:
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় ২ লক্ষ ৬ হাজার ৫ শত ৪৭ জন মানুষের বসবাস। এটি জেলার সবচেয়ে ছোট একটি উপজেলা। জেলা সদর থেকে এই উপজেলার দূরত্ব ২১ কিলোমিটার। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার কথা চিন্তা করে ৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণ করে সরকার।
কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কানিস ফারহানার অবহেলা ও উদাসীনতায় প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্য সেবা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
গত ২০ এপ্রিল রবিবার সকাল ৯ টা। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। হাতে ও পায়ে ব্যথা নিয়ে কয়েকজন রোগী চিৎকার করলেও পাচ্ছেন না সেবা। কষ্টে কাটছে তাদের সময়। এসব বিষয় দেখভালের জন্য অফিসে তখনো আসেনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কানিস ফারহানা। তার অনুপস্থিতিতে চিকিৎসা সেবা ও দাপ্তরিক কাজে সৃষ্টি হচ্ছে নানা জটিলতা। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক। আর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলছেন, দাপ্তরিক কাজে বাইরে থাকতে হয় মাঝে মাঝে।
সূত্র জানায়, বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কানিস ফারহানা ১৪ মার্চ ২০২২ সালে এ হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন। এরপর বিভিন্ন অজুহাতে তিনি অনুপস্থিত থাকেন। গত বছরের নভেম্বর মাসে কর্মস্থলে ১০ দিন অনুপস্থিত আর ডিসেম্বর মাসে ১৮ দিন অনুপস্থিত, ৬ দিন লেট এবং বাকী দিনগুলোতে তিনি সকাল দশটার পর আসেন এবং দুপুর দেড়টায় অফিস ত্যাগ করেন। তার দেরীতে আসা যেন নিত্য দিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্তমানে তিনি আরো দেরীতে অফিসে আসেন। বেশ কয়েকদিন সরেজমিনে গিয়েও তার সত্যতা পাওয়া গেছে। শুধু কর্মস্থলে অনুপস্থিত নয়, তিনি মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে আসছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি কোয়াটারে থাকার নিয়ম থাকলেও তিনি যোগদানের পর থেকেই নওগাঁ সদর থেকে অফিস করেন। এবং এভাবেই তিনি সেবাগ্রহীতাদের বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দিনের পর দিন, এমনকি মাসের পর মাস ইচ্ছেমতো চাকুরি করে চলেছেন। যেন দেখার কেউ নেই।
স্থানীয়রা বলছেন, গত এক বছর ধরে চালক অভাবে এম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত এই উপজেলার অসহায় রোগীরা। ফলে চালক অভাবে নষ্ট হচ্ছে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত এম্বুলেন্সটি। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে হাসপাতালে চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটে এবং হাসপাতালের রাজস্ব খাতের ২ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা চুরি হয়। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৪ মাসেও কোন মামলা করেনি। চলতি মাসের ৭ এপ্রিল আউটডোরে টিকিট কাউন্টারে রোগীর কাছ থেকে টিকিট বাবদ ৩ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও নেওয়া হচ্ছে ৫ টাকা। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার জানালেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সচেতন মহল বলছে, সরকারি বিধি অনুসারে একজন কর্মকর্তা তিন বছরের অধিক একই জায়গায় থাকতে পারবেন না। কিন্তু নিজ কাজে এতোটুকু উদাসীনতা ও অবহেলার পরও সরকারি নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে তিনি স্বপদে বহাল তবিয়তে আছেন। তার বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
বুধবার দুপুরে এসব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কানিস ফারহানার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, চুরির ঘটনায় থানায় জিডি করেছি, পুলিশ তদন্ত করছে। রোগীর কাছ থেকে ৩ টাকার টিকিট ৫ টাকা নেওয়ার বিষয়ে অফিস স্টাফদের সাবধান করেছি। আপনি মাসে ১২ দিন অফিস করেন আর অন্য দিনগুলোতে লেট করে অফিসে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দপ্তরিক কাজের জন্য মাঝে মাঝে এমনটা হয়। তবে আমি নিয়মিত অফিস করার চেষ্টা করি। ব্যক্তিগত কাজে অফিসের সরকারি গাড়ি ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি একটা প্রকল্পের গাড়ি। প্রকল্পটি আপাতত বন্ধ থাকায় গত এক বছর ধরে তিনি জ্বালানী বাবদ কোন বিল পাননি। তাই গাড়িটি সচল রাখার স্বার্থে নিজ খরচে ব্যবহার করছেন। সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করা যাবে কিনা এ ধরনের প্রশ্ন করলে তিনি কোন উত্তর দেননি।
এ ব্যাপারে বুধবার দুপুরে নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. মো. আমিনুল ইসলাম এর কাছে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কানিস ফারহানার অবহেলা ও উদাসীনতা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অভিযোগ পেয়েছি। বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরার ব্যবস্থা আছে। আমি বায়োমেট্রিক হাজিরা পরীক্ষা করবো। অনিয়ম পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া, প্রকল্পের সরকারি গাড়ি তিনি ব্যবহার করতে পারেন না বলে সিভিল সার্জন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারের বিষয়টি এখন দৃশ্যমান। এ কারণে দুই-এক দিনের মধ্যে তাকে শোকজ করা হবে। অন্যান্য অনিয়মের অভিযোগের বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান সিভিল সার্জন।
১১৫ বার পড়া হয়েছে