কারিগরি ত্রুটিতে মেট্রোরেল বন্ধ ছিল দেড় ঘণ্টারও বেশি সময়

শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ৫:১০ অপরাহ্ন
শেয়ার করুন:
ঢাকা শহরের ব্যস্ততম সময়, শনিবার বিকেলে, হঠাৎ করে থেমে যায় মেট্রোরেল চলাচল। কারিগরি ত্রুটির কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে এক ঘণ্টা ৪৯ মিনিট।
এই সময়ের পুরোটা জুড়েই যাত্রীরা ছিলেন চরম অনিশ্চয়তায়। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের সময়মতো কোনো তথ্য দেয়নি, এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা ওয়েবসাইটেও ঘটনার বিষয়ে কোনো আপডেট পাওয়া যায়নি।
বিকেল ৫টা ৬ মিনিটে বিজয় সরণি সাবস্টেশন থেকে ট্রেন লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আশপাশের শাহবাগ ও শেওড়াপাড়া সাবস্টেশন থেকেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। মূলত বিদ্যুৎ সরবরাহের এই ত্রুটির জেরেই থেমে যায় ট্রেন চলাচল।
মেট্রোরেল পরিচালনাকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানায়, বিদ্যুৎ পুনঃসংযোগের জন্য প্রয়োজন হয় কারিগরি দলের সশরীর উপস্থিতির। কিন্তু এ ধরনের যান্ত্রিক সমস্যা সমাধানে নিয়োজিত কর্মীরা থাকেন উত্তরা ডিপোতে। ফলে যানজট ঠেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ১ ঘণ্টা ২২ মিনিট। এরপর বিদ্যুৎ পুনঃসংযোগের কাজ সম্পন্ন হয় মাত্র ৫ মিনিটে। সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে পুনরায় চালু হয় মেট্রোরেল।
এই দীর্ঘ সময় স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের কোনো তথ্য জানানো হয়নি। অনেকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে ফিরে যান। কয়েকটি স্টেশনে টিকিট বিক্রি বন্ধ করে ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু স্থায়ী কার্ডধারীরা সমস্যায় পড়েন, কারণ একবার ভেতরে প্রবেশের পর বাইরে গেলে কার্ডের টাকা ফেরত পাওয়া যাবে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য মেলে না।
মেট্রোরেলের ফেসবুক পেজেও ঘটনার দিন (২৬ এপ্রিল) কোনো ঘোষণা ছিল না। সর্বশেষ পোস্ট ১৩ এপ্রিল, যেখানে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দুই স্টেশন বন্ধ থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। অথচ পেজটির অনুসারী সংখ্যা ১ লাখ ৬২ হাজারেরও বেশি।
ডিএমটিসিএলের জনসংযোগ কাঠামোও প্রশ্নবিদ্ধ। প্রতিষ্ঠানটির কোনো স্থায়ী জনসংযোগ কর্মকর্তা নেই। প্রশাসনের উপব্যবস্থাপকই এই দায়িত্ব সামলান অতিরিক্তভাবে। তাঁকে ফোনে পাওয়া গেলে তিনি শুধু জানান, বৈদ্যুতিক সমস্যার কারণেই চলাচল বন্ধ ছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের অব্যবস্থাপনা একটি আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার জন্য খুবই অস্বস্তিকর। অল্প সময়ের ত্রুটির সমাধানে দীর্ঘ বিলম্ব এবং তথ্য না দেওয়ার প্রবণতা যাত্রীসেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেট্রোরেল সংশ্লিষ্ট দুই কর্মকর্তা জানান, শুধুমাত্র উত্তরা ডিপোতে কারিগরি দল রাখার কারণে সময়মতো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয় না। আগারগাঁও বা শাহবাগের মতো মধ্যবর্তী স্টেশনগুলোতে টেকনিক্যাল টিম রাখলে এমন বিলম্ব এড়ানো যেত।
ঘটনার পর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গণমাধ্যমকে জানান, তিনি নিজেও ঘটনাটি পরে জানতে পেরেছেন এবং পরে বিদ্যুৎ বিভাগকে যুক্ত করে ব্যবস্থা নিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিদিন ৪ লাখের বেশি যাত্রী পরিবহনকারী মেট্রোরেল ব্যবস্থায় দ্রুত তথ্য সরবরাহ এবং দক্ষতা আরও বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
১১৭ বার পড়া হয়েছে